Pages

হযরত আইউব (আঃ)কে কঠিন অসুখের দ্বারা আল্লাহর পরীক্ষা

হযরত আইউব (আঃ) ও হযরত ইউসুফ (আঃ) এর পরে এবং মুসা (আঃ) এর আবির্ভাবের পূর্বে হযরত আইউব (আঃ)এর এই পৃথিবীতে আগমন ঘটে। আইউব (আঃ) ছিলেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর। হযরত ইসহাক (আঃ) এর এক পুত্র ছিল ঈসু তার অন্য নাম ছিল ‘আদুম’। আইউব (আঃ) তার বংশের একজন। তাই তাঁকে আদুমী বংশের লোক হিসাবে ধরা হয়।

মরু সাগর (ডেড সি বা মৃত সাগর) ও আকাবা উপসাগরের মধ্যবর্তী স্থানে আদমী জাতির বসবাস ছিল। অঞ্চলটির উত্তরে মরু সাগর ও ফিলিস্থীন, দক্ষিনে আকাবা উপসাগর ও মাদইয়ান, পশ্চিমে সাইনা উপত্যকা, পূর্বে আরবের উত্তর সীমান্ত ও ‘মাওয়াব’ অঞ্চল অবস্থিত। ‘তওরাত’ কিতাবে আইউব (আঃ) এর এলাকাটির নাম ‘বোসরা’ হিসাবে উল্লেখ আছে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর যুগেও ‘বোসরা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল।

হযরত আইউব (আঃ) আল্লাহর অত্যন্ত খাঁটি বান্দা ছিলেন। শয়তান তাকে দেখে হিংসা করতো। কারণ শয়তান বেহেশত থেকে বিতারিত হবার সময় আল্লাহর ইজ্জতের কসম খেয়ে বলেছিলেন যে, আদম জাতির সকলকে সে পথভ্রষ্ট করে ছাড়বে। আল্লাহ বলেছিলেন, “কিন্তু আমার প্রকৃত ঈমানদার বান্দাকে তুমি কখনও পথভ্রষ্ট করতে পারবে না। আইয়ূব (আঃ) কে দেখে শয়তান ফন্দি করে আল্লাহকে বললো, “আইয়ূব (আঃ) এর কোন অভাব নাই, তাঁর শত পুত্র, তিন কন্যা। আরামের জন্য তাকে তুমি অগনিত সম্পদ দিয়েছ তাইতো সে তোমার ভক্ত।”

আল্লাহতা’য়ালা তখন আইয়ূব (আঃ) এর সমস্ত ধন-সম্পদ, পুত্র-কন্যা নিয়ে নিলেন। কঠিন পরীক্ষার মাঝে আইয়ূব (আঃ) পড়লেন। তাঁর সব স্ত্রী-কন্যা-পুত্র, আতœীয়-স্বজন সবাই তাঁকে ছেড়ে চলে গেলেন। শুধুমাত্র একজন স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে গেলেন না। ভীষন কষ্টের মাঝে থেকেও তিনি প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলেন। ‘হে আল্লাহ’ উলঙ্গ অবস্থায় আমি মাতার গর্ভ হতে ভূমিষ্ট হয়েছি এবং উলঙ্গ অবস্থাতেই আবার ফিরতে হবে। আল্লাহ তুমিই সব দিয়েছ, আবার তুমিই সব নিয়ে নেবে। তুমি আমায় যখন যেভাবে রাখ সে অবস্থাতেই যেন ঈমান আমল ঠিক রেখে তোমার শুকরিয়া আদায় করতে পারি, সে তৌফিক দিও।

শয়তান তখন বললো, “হে আল্লাহ মানুষের শরীরের উপর কষ্ট না এলে মানুষ আল্লাহকে ভোলে না। তাঁর অস্থি-মাংস বিপন্ন করো। দেখবে তখন সে তোমার অবাধ্য হবে।” আল্লাহর বিশ্বাস ছিল যে, শয়তান তার খাঁটি বান্দার কখনই কিছু করতে পারবে না। তাই তিনি আইউব (আঃ) কে আবারো পরীক্ষায় ফেললেন।

এবারে আইয়ূব (আঃ) এর আপাদমস্তক ভয়››কর পোকা দ্বারা পূর্ণ করলেন। ভীষন কষ্ট ও যন্ত্রনায় পতিত হলেন তিনি। তারপরেও আইয়ূব (আঃ) এক মুহুর্তের জন্যও সবর ভঙ্গ করেননি। তাঁর যত দুঃখ-কষ্ট বাড়লো, তিনি তত বেশী বেশী আল্লাহকে ডাকতে লাগলেন। শত কষ্টের মাঝেও আল্লাহর বিরুদ্ধে একটি অক্ষরও তাঁর মুখ দিয়ে বের হলো না। বরংচ তিনি গভীর আশা ও বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, ‘হে আল্লাহ তোমার রহমত দ্বারা আমার সকল দুঃখ-কষ্ট দূর করে দাও।

আঠারো বৎসর যাবৎ দীর্ঘ কঠিন পরীক্ষায় আইয়ূব (আঃ) উত্তীর্ণ হলেন। আল্লাহর রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হলো। আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তিনি যমীনে আঘাত করলেন। তৎক্ষনাৎ সেখান হতে ঝর্নাধারা বের হলো। তিনি সে পানি পান করলেন ও পানি দিয়ে গোসল করলেন। এতে আইউব (আঃ) সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে গেলেন।

হযরত আইউব (আঃ) এর স্ত্রী ’বিবি রহিমা’ অতিশয় নেককার ও স্বামীভক্তা ছিলেন। আইউব (আঃ) এর কঠিন অসুখের সময় সবাই তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী রহিমা তাঁকে ছেড়ে কোথাও যাননি। প্রান ঢেলে অনেক সেবা যতœ করতেন। একদিন সামান্য কারণে আইউব (আঃ) এর মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তখন তিনি আল্লাহর কসম খেয়ে বলেছিলেন যে, সুস্থ হলে তিনি স্ত্রীকে একশত বেত্রাঘাত করবেন। পরে এ ধরনের কসমের জন্য অনুতপ্ত হয়েছিলেন। আইউব (আঃ) সুস্থ হবার পর আল্লাহতা’য়ালা তাঁকে এ ব্যাপারেও অনুগ্রহ করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা তাঁকে একশত বেত্রাঘাতের পরিবর্তে এক মুষ্ঠি তৃনগুচ্ছ হাতে নিয়ে তা দ্বারা স্ত্রীকে হালকা ভাবে মেরে কসম পুরা করার সুযোগ দিয়েছেন।

আইউব (আঃ) ছিলেন অতি মহৎ বান্দা, প্রচন্ড ধর্য্যশীল ও আল্লাহর প্রতি ভীষন অনুরাগী। আল্লাহর সকল পরীক্ষাতেই তিনি কৃতকার্ষ হয়েছেন। তাই আল্লাহ তাঁকে আবারও অনেক ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলেন। আল্লাহর অশেষ কুদরতে পথে-ঘাটে-মাঠে তাঁর উপর ঝাঁকে ঝাঁকে স্বর্ন পতঙ্গ উড়ে পড়তো। আমাদেরও উচিৎ আইউব (আঃ) এর মত প্রচন্ড ধৈর্য্যশীল, কষ্ঠসহিষ্ণু ও ঈমানদার হওয়া। দুঃখ-কষ্ট-প্রাচুর্যে সর্বাবস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।
-----------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র ঃ
আল্ কোরআন: সূরা আম্বিয়া, পারা ১৭ রুকু ৬,সূরা সোয়াদ, পারা ২৩, রুকু ১৪,সূরা বাকারা পারা ২, রুকু ৩, মকসুদুল মুসলিমীন, বোখারী শরীফ, আরজুল কোরআন, ২য় খন্ড, ১, ২৮, ৩৮ পৃষ্ঠা ।

প্রকাশ ঃ দৈনিক ইনকিলাব, ১ জুন, ২০০৯।                
------------------------------------------------------------------------
By 
Khandaker Nazneen Sultana
Journalist
reade more... Résuméabuiyad

হযরত ইউসুফ (আঃ) ও জুলেখা

হযরত ইউসুফ (আঃ) এর পিতা ছিলেন হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম। হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর স্ত্রীর পক্ষ হতে বার জন ছেলে ছিল। ইউসুফ (আঃ) ও তার ছোট ভাই বিনইয়ামীন ছিলেন একই মায়ের ওরসের। ছোটবেলাতেই হযরত ইউসুফ (আঃ), ইয়াকুব (আঃ) এর উপর নবুয়তের নূরের উজ্জ্বল আভা দেখতে পেয়েছিলেন। আবার ইউসুফ (আঃ) ও বিনইয়ামীনের মাতা তাদেরকে শিশু অবস্থায় রেখেই মারা যান। তাই ইয়াকুব (আঃ) এদের দুইভাইকে অন্যদের চেয়ে একটু বেশী আদর করতেন। তাই বড় ভাইয়েরা তাদের দুজনকেই হিংসা করতো।

ইউসুফ (আঃ) এর শিশুকাল ঃ

ছোটবেলায় ইউসুফ (আঃ) চমৎকার একটি স্বপ্ন দেখলেন। তিনি দেখলেন, এগারোটি নক্ষত্র ও চন্দ্র-সূর্ষ ইউসুফ (আঃ) এর সম্মুখে নত হয়ে তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করছেন। স্বপ্ন শুনে ইয়াকুব (আঃ) ইউসুফ (আঃ) কে অনেক দোয়া করলেন এবং স্বপ্নটি তার সৎ ভাইদের কাছে প্রকাশ করতে বারণ করলেন। ইয়াকুব (আঃ) বুঝতে পারলেন, একদিন ইউসুফ (আঃ) আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত প্রাপ্ত হবেন। গভীর জ্ঞানী হবেন ও অত্যন্ত নিখুত ভাবে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পারবেন।

ইউসুফ (আঃ) এর ভাইয়েরা তাকে মেরে ফেলার কিংবা দূরে কোথাও ফেলে আসার ষড়যন্ত্র করতে লাগলো। একদিন সকালে ভাইয়েরা পিতার কাছ হতে অনুমতি নিয়ে ইউসুফ (আঃ) কে ঘুরতে নিয়ে গেল। এবং তাকে অন্ধকার কূপের মাঝে ফেলে দিল। তারপর ইউসুফ (আঃ) এর জামায় রক্ত মেখে, সন্ধার পর ভাইয়েরা কাঁদতে কাঁদতে পিতাকে এসে বললো যে, তারা দৌড় প্রতিযোগীতা করছিল, এর মাঝে বাঘ এসে ইউসুফ (আঃ) কে খেয়ে ফেলেছে। জামাটি বাঘে খাওয়া মানুষের জামার মতো ছিঁড়া-ফাটা ছিল না। তাই ইয়াকুব (আঃ) বুঝতে পারলেন যে, ছেলেরা মিথ্যা বলছে। ইউসুফ (আঃ) কে বাঘে খায় নি। ইয়াকুব (আঃ) ইউসুফ (আঃ) কে আল্লাহর হাওলা করে ধৈর্য্য ধরে রইলেন।

এদিকে একদল সওদাগর ঐ পথ দিয়ে যাবার সময় কূপ থেকে পানি ওঠাবার জন্য কূপের ভেতরে ডোল ফেললো। আর আল্লাহর অশেষ রহমতে ইউসুফ (আঃ) ঐ ডোল ধরেই কূপ হতে উপরে উঠে এলেন এবং প্রানে বেঁচে গেলেন। সওদাগর দল তাকে লুকিয়ে রাখলো। তারপর মিসরে পৌঁছে কিছু রৌপ্য মুদ্রার বিনিময়ে ইউসুফ (আঃ) কে মিসরের মন্ত্রী আযীযের কাছে বিক্রি করে দিলো।

মিসরের উজিরে আযমের গৃহে ইউসূফ (আঃ):
 
মিসরের উজিরে আযম তথা  শাসনকর্তা আযীয নি:সন্তান ছিলেন। তাই তিনি ইউসুফ (আঃ) কে বিশেষ সুনজরে রক্ষনাবেক্ষন করার জন্য তাঁর স্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন। হয়তো ভবিষ্যতে তিনি তাদের কোন উপকারে আসতে পারেন, সে আশায়। ইউসুফ (আঃ) ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শন ও আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি যখন যুবক হয়ে উঠলেন, তখন উজিরে আযমের ছোট স্ত্রী যুলেখা তাকে পছন্দ করে ফেললেন। একদিন যুলেখা ইউসুফ (আঃ) কে প্রেমের আহ্বান জানালেন। এতে ইউসুফ (আঃ) ভয় পেলেন ও আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করলেন। ইউসুফ (আঃ) কে আল্লাহ তা’য়ালা পাপ হতে রক্ষা করলেন। কিন্তু সারা শহরে ইউসুফ (আঃ) ও যুলেখাকে নিয়ে কানাঘুষা চলতে লাগলো। এই পরিস্থিতিতে যুলেখা শহরের কিছু মহিলাকে আমন্ত্রন করলেন ও ছুরি দিয়ে কেটে খাবার মত খাদ্য ও ফলের ব্যবস্থা করলেন। তারা সবাই নিমন্ত্রনে এলে যুলেখা ইউসুফ (আঃ) কে তাদের সম্মুখে ডাকলেন।

ইউসুফ (আঃ) সম্মুখে এলে সব অতিথিরা তাকে দেখে তার রুপ-সৌন্দর্ষে থ’ হয়ে গেল। নিমন্ত্রিত নারীরাও ইউসুফ (আঃ) কে পরামর্শ দিলেন, আজীজের স্ত্রী যুলেখার প্রেমে সারা দেবার জন্য। ইউসুফ (আঃ) খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়লেন এবং আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানালেন, “হে আল্লাহ এর চেয়ে আমার কাছে জেলখানা বা কারাগারই উত্তম। তুমি আমাকে তাদের ফন্দি হতে বাঁচিয়ে রাখো। যদি তুমি না বাঁচাও, তবে আমি তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়তে পারি এবং অজ্ঞানদের দলভুক্ত হয়ে যেতে পারি।” আল্লাহ তা’য়ালা ইউসুফ (আঃ) এর দোয়া কবুল করলেন এবং পরবর্তীতে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হলো।

কারাগারে ইউসুফ (আঃ):

ইউসুফ (আঃ) কারাগারে তওহীদের প্রচার করতে থাকে। তার জ্ঞান-গুণ এবং নূরানী চেহারায় সবাই তাঁর প্রতি ভীষন ভাবে আকৃষ্ট হতো। তিনি কারাগারবাসীদের বোঝাতেন যে, ‘আমি আমার পূর্ব পূরুষ ইব্রাহীম (আঃ), ইসহাক (আঃ) ও ইয়াকুব (আঃ) এর মতবাদের অনুসারী।’ আল্লাহ এক, অদ্ধিতীয়, আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর উপাসনা করা মহা অন্যায়। তোমরা সবাই এক আল্লাহর বন্দেগী করবে।

ইউসুফ (আঃ) যখন কারাগারে ছিলেন, তখন সেখানে রাজার খাবারে বিষ মেশানোর অপরাধে দুই কয়েদী বন্দী ছিলেন। একদা দু’জনেই স্বপ্ন দেখলেন। এরা ইউসুফ (আঃ) এর কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন। একজন দেখলেন যে, তিনি আঙ্গুরের রস বের করছেন। অপরজন দেখলেন, তিনি যেন মাথায় রুটির বোঝা রেখেছেন আর কিছু পাখী তা খাচ্ছে।

 ইউসুফ (আঃ) স্বপ্নের ব্যাখ্যায় বললেন, যে দেখেছেন আঙ্গুরের রস বের করছে, বিচারে সে নির্দোষ সাব্যস্ত হবে। পূনরায় চাকরীতে বহাল থাকবে ও পূর্বের মত রাজাকে সূরা পান করাবে। আর দ্বিতীয় জনের শূলদন্ড হবে এবং পাখীরা তার মৃত্যুর পর তার মাথার মগজ খাবে। তারপর সত্যিই ইউসুফ (আঃ) এর স্বপ্নের ব্যাখ্যা বাস্তবে পরিনত হলো।

ইউসুফ (আঃ) মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদীকে বলে দিলেন, যেন রাজার কাছে তার কথা উল্লেখ করে। লোকটিকে শয়তান ভুলিয়ে দিলো। তিনি তখন রাজার কাছে ইউসুফ (আঃ) প্রসঙ্গে কিছু বললেন না। ইউসুফ (আঃ) কে আরো কয়েক বছর কারাগারে থাকতে হলো।

একদা রাজা স্বপ্ন দেখলেন যে, সাতটি হৃষ্টপুষ্ট গরু অন্য সাতটি জীর্ন-শীর্ন গরুকে খেয়ে ফেলেছে। আরো দেখলেন, সাতটি তরতাজা সবুজ রঙের শস্য ছড়া, সাতটি শুষ্ক ছড়া। শুষ্ক ছড়াগুলো সাতটি তরতাজা ছড়াকে জড়িয়ে ধরে শুষ্ক করে ফেলছে। রাজা সভার গন্যমান্য সবার কাছে তাঁর স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন। কিন্তু কেউই এই স্বপ্নগুলোর যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারলো না। তারা বললো, এগুলো হলো মনের বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনার সমষ্টিগত বাস্তবতাহীন স্বপ্ন। তখন কারাগারে মুক্তিপ্রাপ্ত লোকটির ইউসুফ (আঃ) এর কথা মনে পড়লো। এবং সে রাজাকে ইউসুফ (আঃ)এর স্বপ্ন ব্যাখ্যাকারী গুন সম্পর্কে অবগত করলেন। তখন রাজা লোকটিকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানার জন্য ইউসুফ (আঃ) এর কাছে পাঠালেন।

রাজার দেখা স্বপ্নের ব্যাখ্যা করে ইউসুফ (আঃ) জানালেন, সাত বছর ফসল বুনতে হবে, এতে প্রচুর ফসল হবে। তখন শস্য কেটে আনার পর তা গুচ্ছের মধ্যেই রেখে সংরক্ষন করতে হবে। প্রয়োজন মতো কিছু শস্য আহারের জন্য মাড়াই করে নেবে। পরের সাত বৎসর ভীষন দুভিক্ষ হবে। তখন পূর্বের সংরক্ষিত সাত বছরের ফসল প্রায় সবই খেয়ে শেষ হয়ে যাবে। সামান্য কিছু শস্য বীজের জন্য সামলিয়ে রাখবে। পরবর্তীতে আবার সুদিন আসবে। বৃষ্টি হবে এবং ফল-ফলারীর রস চিপে জমা করার সুযোগ আসবে।

ইউসুফ (আঃ) এর এত সুন্দর স্বপ্নের ব্যাখ্যা শুনে রাজা অভিভূত হয়ে পড়লেন। লক্ষ লক্ষ নরনারীর জীবন রক্ষার্থে সাহায্যকারী হিসেবে ইউসুফ (আঃ) এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। তাই ইউসুফ (আঃ) কে রাজার কাছে নিয়ে যেতে আদেশ করলেন।

মিসরে ইউসুফ (আঃ) এর রাজকীয় দায়িত্ব পালন ঃ 

  
ইউসুফ (আঃ) দীর্ঘ দশ বৎসর মিথ্যা অপবাদে কাটিয়েছিলেন। তারপর রাজদরবারে স্বয়ং রাজা তার সাথে দেখা করতে চাইলেন। ইউসুফ (আঃ) এর আতœমর্ষাদা বোধ খুব বেশী ছিল। তাই তিনি দশ বৎসর পূর্বে তার উপর মিথ্যা অপবাদ উঠিয়ে নেবার আবেদন করলেন। ইউসুফ (আঃ) এর বাসনা অনুযায়ী, রাজা যুলেখার নিমন্ত্রিত নারী অতিথিদের ডেকে সত্যিকার ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা সবাই একবাক্যে স্বীকার করলেন যে, ইউসুফ (আঃ) নির্দোষ। তিনি সম্পূর্ণ খাঁটি ও সত্যবাদী।

রাজা সমস্ত ব্যাপার পর্যবেক্ষন করে ইউসুফ (আঃ) এর উপর আরোপিত সকল অপবাদ হতে তাঁকে মুক্ত করলেন এবং সসম্মানে রাজ দরবারে আমন্ত্রন করলেন। ইউসুফ (আঃ) কে রাজ্যের সম্পদ ভান্ডারের কর্তৃপদে নিয়োগ করলেন। কারাগারে কয়েদী ইউসুফ (আঃ) আজ সেদেশেরই রাজকীয় মর্যাদা প্রাপ্ত। একেই বলে আল্লাহর রহমত। আল্লাহ তাঁর নেক বান্দাদের কর্মফল ইহকালে নষ্ট করেন না। আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত নেয়ামত।

ইউসুফ (আঃ) নিজ বুদ্ধি-বিবেচনামতো ভবিষ্যৎ দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করার জন্য কাজ করে যেতে লাগলেন। সাত বছর ভীষন ভালো ফসল হলো। বাড়তি সব শস্য জমা করে রাখলেন। পরে দেখা দিল চরম দুর্ভিক্ষ। মিসরের কাছে সিরিয়া ও কেনান অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়লো দুর্ভিক্ষ। এই দুর্ভিক্ষের সময় মিশরের সরকারী ভান্ডার হতে লোকদের খাদ্য ক্রয়ের সুযোগ দেয়া হলো। ইউসুফ (আঃ) এর ভাইয়েরাও মিসরে খাদ্য ক্রয় করতে এলেন। ইউসুফ (আঃ) তাঁর সৎ ভাইদের চিনলেন কিন্তু ভাইয়েরা তাঁকে চিনলো না।

শস্য ক্রয়ের সময় প্রত্যেক পরিবারের জনসংখ্যার বিবরন দিতে হয়। ইউসুফ (আঃ) এর ভাইয়েরাও তাদের পরিবারের তথ্য দিয়েছিলো। সেখানে তাদের ছোট ভাই বিনইয়ামীনের নাম ছিল। কিন্তু সে তাদের সাথে আসেনি। ইউসুফ (আঃ) তার ভাইদের বলে দিলেন, যেন পুণরায় আসবার সময় বিনইয়ামীনকে নিয়ে আসে। তা’না হলে খাদ্য দেয়া হবে না। তারপর, ভাইদের শস্যের বস্তার মাঝে গোপনে তাদের দেয়া শস্যের মূল্যসমূহ আবার ফেরত দিয়ে দিলেন।

ইউসুফ (আঃ) এর ভাইয়েরা বাড়ীতে আসার পর খাদ্যমূল্য পুনরায় ফিরে পেয়ে অত্যন্ত খুশী হলেন এবং এবারে বিনইয়ামীনকে সাথে নিয়ে যেতে চাইলেন। ইয়াকুব (আঃ) এর কাছে বিনইয়ামীনকে হেফাজতে রাখার ওয়াদা করে ভাইয়েরা সবাই মিলে আবারো মিসরে এলেন শস্য নিতে। ইউসুফ (আঃ) বিনইয়ামীনকে গোপনে ডেকে নিয়ে নিজ পরিচয় দিলেন। এবং তাকে কাছে রাখার বাসনা ব্যাক্ত করলেন।

ইয়াকুব (আঃ) এর দেশের নিয়ম ছিল যে, চোরকে মালিকের গোলাম হয়ে থাকতে হতো। ইউসুফ (আঃ) এর ছোটবেলায় তাঁর ফুফু তাঁকে নিজের কাছে রাখার উদ্দেশ্যে ফন্দি করেছিলেন। তিনি নিজের একটি রুপার চেইন ইউসুফ (আঃ) এর কোমরে গুজে দেন। পরে চুরির শাস্তিস্বরুপ ইউসুফ (আঃ) কে তার ফুফু মৃত্যু পর্যন্ত নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। ইউসুফ (আঃ) এবারে বিনইয়ামীনকে নিজের কাছে রেখে দেবার জন্য তেমনই বুদ্ধি করলেন। বিনইয়ামীনের শস্যের বস্তার মাঝে শস্য মাপার রুপার বাটি গোপনে গুজে রাখলেন। বিনইয়ামীন সহ ভাইয়েরা বাড়ীর পথে রওয়ানা দিলে, তাদেরকে রাজার কর্মচারীরা তাল্লাশি করলো ও বিনইয়ামীনের শস্যের বস্তায় হারানো রুপার বাটি পেল।

চুরির শাস্তিস্বরূপ বিনইয়ামীনকে ইউসুফ (আঃ) এর কাছে রেখে দিলেন। ভাইয়েরা ইউসুফ (আঃ) কে বললেন, ‘হে আজীজ, এই ছেলেটির বৃদ্ধ পিতা আছে। তাকে রাখলে তার পিতা প্রায় পাগোল হয়ে যাবেন। এর পরিবর্তে আপনি আমাদের কাউকে রেখে দিন।’ হযরত ইউসুফ (আঃ) বললেন, ‘একজনের দোষের শাস্তি অন্যজনকে দেয়া যাবে না। তাহলে আমরা অন্যায়কারী সাব্যস্ত হবো।’

বিনইয়ামীনের আশা ত্যাগ করে ভাইয়েরা বাড়ী ফিরে এলেন। এবং তাদের পিতাকে সব ঘটনা খুলে বললেন। ইয়াকুব (আঃ) ভীষন দুঃখ পেলেন। তারপরও ধৈর্য্য সহকারে আল্লাহর ফয়সালার অপেক্ষা করতে লাগলেন। আল্লাহতা’য়ালা সর্বোত্তম ফয়সালাকারী। ইউসুফ (আঃ) ও বিনইয়ামীনের শোকে কাঁদতে কাঁদতে ইয়াকুব (আঃ) এর চক্ষু সাদা হয়ে দৃষ্টিশক্তি চলে গেল এবং চিন্তায় শ্বাস রূদ্ধ হয়ে পড়লো।

ইয়াকুব (আঃ) কাউকে দোষারুপ করলেন না। তিনি তাঁর সমস্ত দুঃখ-যাতনা, আবেদন-নিবেদন একমাত্র আল্লাহর কাছেই পেশ করতে লাগলেন। মুমিন বান্দাদের এরূপ কোন দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনা-ব্যার্থতায় কাউকে দোষারুপ না করে সমস্ত অভাব-অভিযোগ একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছেই পেশ করা উচিৎ। পৃথিবীর যাবতীয় সবকিছু আল্লাহর হুকুমেই চলে। অতএব ধৈর্য্য সহকারে পূর্ন ভরসা করা উচিৎ। আল্লাহ তা’য়ালাই সর্বোত্তম হেফাজতকারী এবং তিনি সর্বাধিক দয়ালু।

‘কাফের ছাড়া অন্য কারো আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া উচিৎ নয়।’ তাই ইয়াকুব (আঃ) এর পরামর্শমতো তাঁর ছেলেরা ইউসুফ (আঃ) ও বিনইয়ামীনের খোঁজে বের হলেন। ইউসুফ (আঃ) এর ভাইয়েরা রেশনের বাহানায় আবারো মিসরের সরকারী কর্মকর্তা আজীজ অর্থাৎ ইউসুফ (আঃ) এর কাছে পৌঁছালেন। এবার ইউসুফ (আঃ) ভাইদের কাছে নিজ পরিচয় দিলেন। ভাইয়েরা তখন তাদের অতীত ভুলক্রটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলো। ইউসুফ (আঃ) বললেন, ‘আল্লাহ আমাদের উপর অনুগ্রহ করেছে। সত্যিই যারা গোনাহ হতে বেঁচে থাকে এবং বিপদে ধৈর্য্যধারন করে আল্লাহ তাদের কর্মফল নষ্ট করেন না।

ইউসুফ (আঃ) ভাইদের ক্ষমা  করে দিলেন। এবং তাঁর নিজের একটি জামা তাঁর বাবা অর্থাৎ ইয়াকুব (আঃ) এর জন্য দিলেন। বললেন, জামাটি পিতার চোখের উপর রাখলেই ইনশা-আল্লাহ তিনি তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন।’ হযরত ইউসুফ (আঃ) এর জামা নিয়ে ভাইয়েরা মিসর ত্যাগ করলেই ইয়াকুব (আঃ) ইউসুফ (আঃ) এর সুঘ্রান অনুভব করতে লাগলেন। ইউসুফ (আঃ) এর কথা সত্য হলো। জামা চোখের উপর রাখতেই ইয়াকুব (আঃ) পূনরায় দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন। ইউসুফ (আঃ) এর ভাইয়েরা পিতা ইয়াকুব (আঃ) এর কাছে নিজেদের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইলো।

ইউসুফ (আঃ) এর পিতা-মাতা ও পরিবারবর্গ কেনান হতে মিসরে যাত্রা করলেন। পিতা-মাতার আগমন সংবাদে ইউসুফ (আঃ) অনেকটা অগ্রসর হয়ে তাদেরকে সঙ্গে করে মিসর শহরে নিয়ে এলেন। ইউসুফ (আঃ) নিজ পিতা-মাতাকে রাজকীয় আসনে স্থান দিলেন। সকলের অন্তরে ইউসুফ (আঃ) এর জন্য অনেক শ্রদ্ধার জন্ম নিল। তারা সবাই মিলে ইউসুফ (আঃ) কে সম্মান সূচক সেজদা করলেন। এবং এভাবে ছোট বেলায় দেখা ইউসুফ (আঃ) এর স্বপ্ন সত্যি হলো। আল্লাহ যা করতে ইচ্ছা করেন, অত্যন্ত সুনিপুণ কার্যকৌশলের দ্বারা তা তিনি সম্পন্ন করেন।

অনেকের মতে যোলেখার স্বামী উজিরে আযমের মৃত্যুর পর ইউসুফ (আঃ) এর সাথেই তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর যোলেখার প্রতি হযরত ইউসুফ (আঃ) এর মহব্বত অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু ইউসুফ (আঃ) এর প্রতি যোলেখার মহব্বত কমে যায়। ইউসুফ (আঃ) এই ব্যাপারে যোলেখাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন যে, ইউসুফ (আঃ) এর মাধ্যমেই তিনি আল্লাহর মহব্বত লাভ করেছেন। আর আল্লাহর মহব্বতের কাছে অন্য সব মহব্বতই ম্লান হয়ে যায়।

সবকিছু ফিরে পেয়ে ইউসুফ (আঃ) আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ ও যমীনের তথা সারা জাহানের সৃষ্টিকর্তা আপনি আমাদের অভিভাবক ইহকাল ও পরকালের। চিরকাল আপনার খাঁটি বান্দা হিসেবে আমাদের কবুল করুন। এমন অবস্থায় মৃত্যুবরন করান যেন আপনার প্রিয় ও নেক বান্দাদের শামীল হতে পারি। আমীন’।
------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র ঃ
আল্ কোরআন: সূরা ইউসুফ, পারা ১২-১৩।

প্রকাশ ঃ দৈনিক ইনকিলাব,
১ম কিস্তি ১৪ মার্চ ২০১০, শেষ কিস্তি ১৬ মার্চ ২০১০।       

-----------------------------------------------------------------                         
       By 

Khandaker Nazneen Sultana, 
Journalist
reade more... Résuméabuiyad

হযরত সালেহ (আঃ) ও আল্লাহর উষ্ট্রী


 হযরত সালেহ (আঃ) সামুদ জাতির জন্য পয়গম্বর নিয়োজিত হয়েছিলেন। তাঁর জাতি মদীনা ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে বসবাস করতো। হুদ (আঃ) এর উম্মত আ’দ জাতি যখন আল্লাহ তা’য়ালার গজবে পড়ে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, তখন হুদ (আঃ) এবং তাঁর অনুসারী মোমেনগন আল্লাহর অশেষ রহমতে রক্ষা পেয়েছিলেন। তারাই পরবর্তীকালে সামুদ জাতি হিসেবে পরিচিত হয়েছেন।

সামুদ জাতি পার্থিব সভ্যতায় বেশ উন্নত ও প্রগতিশীল ছিল। তারা ‘ওয়াদিল কুরা’ নামক এলাকায় পাহাড়-পর্বতের ভিতরে, উপরে ও সমতলভূমিতে সুরম্য প্রসাদ নির্মান করতো। কালের বিবর্তনে যখন সামুদ জাতি এক আল্লাহর এবাদত বন্দেগী ত্যাগ করে পৌত্তলিকতায় এবং মূর্তি পূজায় লিপ্ত হলো, তখন সালেহ (আঃ) তাদের মাঝেই জন্ম গ্রহন করলেন এবং তাদের জন্য নবীরূপে মনোনীত হলেন।


সামুদ বংশীয় লোকজন অনেক আরামে থেকেও আল্লাহ তা’য়ালাকে বিশ্বাস
করতো না। অসহায় দরিদ্রদের উপর অত্যাচার করতো। তাদেরকে গো-চরনভূমি ও জলকূপ হতে বঞ্চিত করতো। 

সালেহ (আঃ) সামুদ জাতির লোকদের বলেছিলেন, ‘হে আমার উম্মত, তোমরা এক আল্লাহর বন্দেগী কর। তিনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই। তিনি আমাদেরকে মাটি থেকে পয়দা করেছেন। ধন-দৌলত, রিযিক দিয়েছেন। আল্লাহকে ছাড়া অন্য কারো পূজা করা মহাপাপ। অতএব তোমরা আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আল্লাহ অসীম দয়ালু। তিনি নিশ্চই তোমাদের প্রার্থনা কবুল করে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু তারা সালেহ (আঃ) এর কোন কথাই মানলো না। বরংচ একদিন তারা সালেহ (আঃ) কে বললেন, ‘আপনি যদি এই পাহাড়ের পাথর হতে একটি উট বের করে দেখাতে পারেন, তবে আমরা ঈমান আনবো।
হযরত সালেহ (আঃ) তাদের ঈমানের প্রতি ভীষন অনুরাগী ছিলেন। তিনি তাদের এই প্রস্তাবকে বিশেষ একটি সুযোগ মনে করে আল্লাহর কাছে সামুদ জাতির আশা পূরনের জন্য দোয়া করলেন। এবং তাদের ফরমায়েশ মতো পাহাড়ের ভেতর থেকে একটি উট বের করার জন্য প্রার্থনা করলেন।
আল্লাহ হুদ (আঃ) এর দোয়া কবুল করলেন। তখনি পাহাড়ের একটি পাথরে ভীষন কম্পন হলো ও তা ফেটে একটি বিশালাকায় গর্ভবতী উট বের হলো। কিছুদিন পরই উষ্ট্রী (স্ত্রী উট) টি একটি বাচ্চা দিল।

দুষ্ট কাফের লোকেরা শুধু মৌখিক ওয়াদা করেছিল। মূলত: তারা ছিল মোনাফিক। তাই তারা তাদের স্বীকারোক্তি হতে ফিরে গেল। তারা ভেবেছিল সালেহ (আঃ) পাহাড় থেকে উট বের করে আনতে পারবে না। ফলে তাদেরকে ঈমানও আনতে হবে না। সামুদ জাতির শত অন্যায় আল্লাহ তা’য়ালা সহ্য করলেন। তিনি অশেষ ধৈয্য সহকারে তাদেরকে আবারও সুযোগ দিলেন।

উষ্ট্রীটি ছিল অনেক বড়। তাই অনেক বেশী বেশী খেত। মাঠের সমস্ত ঘাস ও কূপের সমস্ত পানি সে একাই খেয়ে ফেলতো। দেশের পশুপাল এই উটটিকে দেখলেই ভয়ে ছুটে পালাতো। তাই দেশবাসী উটটিকে নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত ও অস্থির হয়ে পড়লো। হযরত সালেহ (আঃ) তাদেরকে সতর্ক করে দিলেন যে, এই উটটি তোমাদের জীবন-মৃত্যুর পরীক্ষার বস্তু। কাজেই এর কোন অনিষ্ট করবে না। তাহলে আল্লাহর গযব নেমে আসবে। এবং তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে।

সালেহ (আঃ) তাদেরকে একটি সুপরামর্শ দিলেন যে, আল্লাহর উট একদিন মাঠে চড়ে বেড়াবে, ঘাস খাবে ও কূপের পানি পান করবে। সেদিন তোমাদের
পশুপাল গৃহে আটক থাকবে। আর একদিন তোমাদের পশুপাল মাঠে চড়ে বেড়াবে ও পানি পান করবে। এভাবে আল্লাহর উট ও তোমাদের পশু-পাখি পালাক্রমে একদিন মুক্ত থাকবে ও একদিন আটক থাকবে।

কেউ আল্লাহর কাছ হতে জোর করে বা অতি আবদার করে কিছু চেয়ে নিলে শত কষ্ট হলেও সে ওয়াদা পূরন করতে হয়। সামুদ জাতিও আল্লাহর কাছে হতে উটকে চেয়ে নিয়েছিল। তাই উট সংক্রান্ত সকল ক্লেশ তাদের মেনে নেয়া উচিৎ ছিল।

সালেহ (আঃ) লূত (আঃ) এর জাতির ধ্বংসের কাহিনী বলেও সামুদ জাতিকে সতর্ক করলেন। তাও তারা কোন কথাই গ্রাহ্য করলো না। তারা সালেহ (আঃ) কে বললো, তুমিতো আমাদের মতই সাধারন মানুষ, তোমার উপর কোন ওহী নাযিল হয়নি। নিজেকে বড় প্রমান করার জন্যই এসব করছো। তারা অসৎ পথ অবলম্বন করলো। আল্লাহর রাসুল সালেহ (আঃ) এর কোন কথাই তারা শুনলো না, মানলোও না। একদিন বাচ্চাসহ উটটি জবেহ করে খেয়ে ফেললো। তারপর সালেহ (আঃ) কে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করতে লাগলো।

সামুদ জাতির গর্বিত সর্দার দলটি সালেহ (আঃ) কে বললেন, ‘তুমি যদি সত্যিই আল্লাহর রাসূল হয়ে থাক, তবে আমাদেরকে যে আযাবের ভয় দেখাও, তা নিয়ে আসতো।’ সালেহ (আঃ) বললেন, ‘তোমরা মাত্র তিন দিন নিজ গৃহে ভোগ-বিলাস করে নাও। তারপরই আযাবে পতিত হবে এর ব্যতিক্রম হবে না।’

নিদিষ্ট দিনে আল্লাহর গযব এলো, ভীষন ভূমিকম্প এসে তাদের সব কাফেরদের ধ্বংস করে দিল। তারা পালাবার সুযোগ ও সামর্থ পেল না। সামুদ জাতির অভিশপ্ত লোকেরা নিজ নিজ ঘরে অধ:মুখে মরা অবস্থায় পড়ে রইলো। মূহুর্তে সারা দেশ নীরব-নিস্তব্দ হয়ে গেল। শুধুমাত্র যারা আল্লাহর ভয়-ভীতিতে ছিল ও ঈমান অবলম্বন করেছিল, তারাই রক্ষা পেল।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ‘তবুক অভিযানে যখন সামুদ জাতির হেজর অঞ্চল দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন রসুল (সাঃ) নিজ সঙ্গীদের বিশেষ ভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, ঐ এলাকার নিদিষ্ট একটি কূপ ছাড়া অন্য কূপের পানি যেন কেউ ব্যবহার না করে। ভুলে এক সাহাবী ওখানকার একটি কূপের পানি দিয়ে রুটি বানাবার আটা তৈরী করলে তা সব ফেলে দেয়া হয়েছিল। নবী করীম (সাঃ) বলেছিলেন, সে এলাকার মধ্য দিয়ে যাবার সময় সবাই যেন ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় কেঁদে কেঁদে দ্রুত বেগে এলাকাটি ত্যাগ করে।

এই অঞ্চলটি মদীনা হতে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। বর্তমানে আরবী মানচিত্রে এটি ‘মাদায়েনে সালেহ’ অর্থাৎ সালেহ (আঃ) এর বস্তি সমূহ নামে পরিচিত।
-------------------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র ঃ
আল্ কোরআন: সূরা আ’রাফ, পারা ৮, রুকু ১৭, পারা ১২ রুকু ৬, পারা ১৯ রুকু ১২, ১৯, পারা ২৭ রুকু ১, পারা ২৪ রুকু ১৬, পারা ২৯ রুকু ৯, সূরা শামস, পারা ৩০, সূরা ফাজর।

প্রকাশ ঃ পাক্ষিক ইতিকথা, ১৬-১৮ ফেব্র“য়ারী, ২০০৯।
-----------------------------------------------------------------
By 
Khandaker Nazneen Sultana
Journalist
reade more... Résuméabuiyad

হযরত হুদ (আঃ) ও ‘জন শুন্য ভূখন্ড’



আদ নামে হযরত নূহ (আঃ) এর এক পৌত্রের পুত্র ছিল। তাঁর বংশধররাই আদ জাতি নামে পরিচিত। হযরত হুদ (আঃ) সেই আ’দ জাতির প্রতি নবীরূপে প্রেরিত হয়েছিলেন।

নূহ (আঃ) এর সময়ে তুফানে সব কাফের মোশরেক ধ্বংস হয়ে যাবার পর, দুনিয়া পূনরায় নতুনভাবে ঈমানদার ব্যক্তিদের নিয়ে আবাদ হয়েছিল। তারপর এই আ’দ জাতিই প্রথম কুফরী ও শিরেকীতে লিপ্ত হয়। তারা মূর্তি পূজা ও দেব-দেবীর উপাসনা করতো। হুদ (আঃ)কে তাই আল্লাহ তা’য়ালা তাদের হেদায়েতের জন্য পাঠান।


 আ’দ জাতি দক্ষিন আরবের আম্মান হতে হাদরামউত ও ইয়ামান পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখন্ডে বসবাস করতো। তাদেরকে আল্লাহতা’য়ালা অনেক শক্তি সামর্থ ও সম্পদ দিয়েছিলেন। স্থপতি বিদ্যায় তারা অতুলনীয় মেধাবী ছিলো। পাহাড় কেটে সুউচ্চ দালান কোঠা তৈরী করতো। কিন্তু তারা পরকালকে ভুলে যেয়ে ইহকালের আরাম আয়েশে লিপ্ত থাকতো। আ’দ জাতি আহ্কাফ মরু অঞ্চলে জলসেচ করে এটিকে উর্বর ভূমিতে পরিণত করেছিলো। অঞ্চলটি শস্য শ্যামল ও সবুজ বাগানে পরিপূর্ণ ছিলো। আল্লাহর এত নেয়ামত ভোগ করেও তারা এক আল্লাহর অস্তিত্বকে বিশ্বাস করতো না।

হুদ (আঃ) তাদেরকে বললেন, ‘হে আমার জাতি! তোমরা এক আল্লাহর এবাদত বন্দেগী কর। তিনি ছাড়া আমাদের আর কোন মাবুদ নেই। তোমাদের কাছে আমি কোন পারিশ্রমিক, টাকা-পয়সা বা ধন-সম্পদ চাই না। আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই আমাকে এর প্রতিদান দেবেন।’ হুদ (আঃ) আ’দ জাতিকে আরো বোঝালেন যে, ‘তোমরা আল্লাহর সকল নেয়ামত স্বরণ করে তার হক আদায় কর। এতেই তোমাদের সাফল্য আসবে। আমি আল্লাহর প্রেরিত রসূল। আল্লাহ তা’য়ালার পয়গাম তোমাদের কাছে সত্যি ও নিখুঁদ ভাবে পৌঁছে দেয়া আমার দায়িত্ব। আমি অন্তর থেকে তোমাদের মঙ্গল কামনা করি।

হুদ (আঃ) এর জাতি তাঁকে বিশ্বাস করলো না। বললো, তোমার কথায় আমরা আমাদের পূর্ব পূরুষের ধর্মতো বাদ দিতে পারিনা। তুমি আমাদের যে আযাবের ভয় দেখাও, পারলে নিয়ে এসো। তখন তাদের মাঝে ভীষন দু’র্ভিক্ষ দেখা দিল। তারা অনেক দুঃখ-কষ্টে পড়লো। হুদ (আঃ) আবারও তাদের বোঝালেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে নত হও ও ক্ষমা প্রার্থনা কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদের সব দোষ ক্ষমা করে দিবেন। দেশে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হবে ও দূভিক্ষ দূর হবে। তা না হলে তোমরা আল্লাহর গজবে পড়বে।

হুদ (আঃ) এর জাতি বললো, ‘আমরা আমাদের দেব-দেবীকে ত্যাগ করবো না। তোমাকে নিশ্চই আমাদের কোন দেবতা অভিশাপ দিয়েছে তাই তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে ও তুমি আবোল তাবোল বকছ।’ এই বলে তারা আল্লাহর নাফরমানী করতেই থাকলো। তারপর একদিন হুদ (আঃ) এর জাতি তাদের এলাকার দিকে ঘন কালো মেঘ উড়ে আসতে দেখলো। তারা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। ভাবলো, এবার তাদের দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে ও তাদের সব দুঃখ-কষ্ট দূর হবে। আসলে তা মেঘমালা ছিল না। তা ছিল সবকিছু ধ্বংসকারী ভয়াবহ আযাব ও ঘূর্নিঝড়ের আগমনী সংকেত।

সেখানে এক নাগাড়ে সাত রাত আট দিন পর্যন্ত ঘূর্নিঝড় চললো। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীগুলো পাহাড় পর্বতের গায়ে আছড়ে পড়তে লাগলো ও প্রচন্ড ভাবে আঘাত পেয়ে খড়-কুটার মতো বাতাসের সাথে উৎক্ষিপ্ত হচ্ছিল। চারপাশে সব ছিন্ন বিছিন্ন লাশ হয়ে পড়ে রইল। যেন গোড়া থেকে উঠনো খেজুর গাছের কান্ড। কাফেরদের কেউই অবশিষ্ট রইল না। তাদের বিশাল সব পাকা-পোক্ত বাড়ীগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। আল্লাহ তাদের এমনই শাস্তি দিলেন।

বর্তমানে এই এলাকাটি আরবী মানচিত্রে রবউলখালী বা ‘জন শুন্য ভূখন্ড’ বলে পরিচিত। এর উত্তরে ‘নজদ,’ দক্ষিনে ‘হাজরামাওত,’ পশ্চিমে ইয়ামান ও পূর্বে ওমান রাজ্য। আ’দ জাতির উপরে আল্লাহর গজবে তাদের শস্য-শ্যামল ভূমিও মরুভূমি হয়ে গেল। জন-মানবহীন মরুপ্রান্তরটি আজও আ’দ জাতির নাফরমানীর সাক্ষী হিসেবে পৃথিবীর বুকে বিদ্যমান আছে।
---------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র ঃ
আলকোরআন: সূরা হুদ, পারা ১২ রুকু ৫, সূরা শোআরা পারা ১৯ রুকু ১১, সূরা শোআরা পারা ২৯ রুকু ৫, সূরা আহ্কাফ পারা ২৬ রুকু ২,৩, পারা ৮ রুকু ১৬।

প্রকাশ ঃ সাপ্তাহিক মুসলিম জাহান, ০৮ এপ্রিল, ২০০৯।
----------------------------------------------------------------

By 
Khandaker Nazneen Sultana
Journalist
 
reade more... Résuméabuiyad

হযরত লুত (আঃ) ও মরু সাগর


নবী হযরত লুত (আঃ) এর পিতার নাম ছির হারান। লূত (আঃ) ছিলেন ইব্রাহীম (আঃ) এর ভাইয়ের ছেলে। ভাতিজা লূত (আঃ) ছোটবেলা থেকেই ইব্রাহীম (আঃ) এর সাহচর্যে বড় হন। এবং ইব্রাহীম (আঃ) এর আহবানে সাড়া দিয়ে সঠিক ধর্ম গ্রহন করেন ও সেই সত্য ধর্ম প্রচার করার জন্য মাতৃভূমি ইরাক ত্যাগ করে হিজরত করে মিশরে চলে আসেন। তিনি ইব্রাহীম (আঃ) এর যুগেই নবুয়ত প্রাপ্ত হন।

মিসরে ইব্রাহীম (আঃ) এর সাথে লূত (আঃ) কিছুদিন কাজ করার পর ইব্রাহীম (আঃ) মিসর হতে সিরিয়ার ফিলিস্তিনে, আর লূত (আঃ) জর্দান রাজ্য বা ট্রান্সজর্দান এলাকায় চলে আসেন। এটি বর্তমানে মরু সাগরের নিকট সডম ও গমোরা নগর হিসাবে খ্যাত। এখানে সাদ্দুম নামে এক বস্তি ছিল। সে বস্তি এবং আশে পাশের আরো কিছু এলাকায় লূত (আঃ) সত্য ধর্মের তবলীগ করতে থাকতেন।

লূত (আঃ) যে জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন, তারা জঘন্য রকমের খারাপ স্বভাবের ছিলো। তারা কুফর, শেরক ইত্যাদির সাথে সাথে জুলুম, অত্যাচারে লিপ্ত ছিল। পথিক, বিদেশী আগুন্তক, বনীক ও ব্যাবসায়ীদের কাছ হতে লুন্ঠন করতো। এছাড়াও তারা এমন এক কদর্য ও নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত ছিল, যা তাদের পূর্বে বিশ্ব জগতের আর কেউই করেনি। তারা মাঠে ঘাটে, রাস্তায়, মাহফিল, মজলিসে বিনা দ্বিধায় পুরুষদের সাথে কুকর্মে লিপ্ত হতো।

হযরত লূত (আঃ) এসব জঘন্য দুস্কর্মের জন্য দেশবাসীকে বিভিন্নভাবে বোঝালেন। তারা বুঝলো না। তারপর তিরস্কার করলেন, কিš ‘তারা তাঁর কথায় কর্ণপাত করলো না। তিনি তাঁর দেশবাসিকে বললেন, নিশ্চই তোমরা এমন এক নির্লজ্জ ও কুৎসিৎ কাজে লিপ্ত যা তোমাদের পূর্বে বিশ্ব জগতের কেউই করেনি। ছেলে ও পুরুষদের সাথে কুকর্ম, ডাকাতি এবং প্রকাশ্য মজলিসে কুকর্ম, তোমরা কি এসবে ডুবে থাকবে? দেশবাসী উত্তর করলো, ‘তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো, তবে আমাদের উপর গজব নিয়ে আসো।’ লূত (আঃ) আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন, ‘হে পরওয়ারদেগার, আমাকে এই দুষ্টদের মোকাবেলায় সাহায্য করুন।

তখন আল্লাহ দু’জন ফেরেশতাদের, মেহমানরুপে তাঁর গৃহে পাঠালেন। ফেরেস্তারা অত্যান্ত সুদর্শন বালকরূপে এলেন। লূত (আঃ) এর বাড়ি এসে, এত সুদর্শন বয়সী বিদেশী মেহমান দেখে, দেশবাসীর চরিত্র ও অভ্যাসের কথা মনে করে, অত্যান্ত ভীত হয়ে গেলেন। তাঁর স্ত্রী ছিল কাফের। সে লূত (আঃ) এর সাথে অত্যান্ত অসহযোগীতা করতো। সে যেয়ে দেশবাসীকে এসব সুদর্শন মেহমানদের খবর দিয়ে আসলো। দেশবাসী মাতালের মতো ছুটে আসতে লাগলো। লূত (আঃ) অস্থির হয়ে পড়লেন। গুন্ডারাও উপস্থিত হলো।

লূত (আঃ) মেহমানদের রক্ষা করার উপায় হিসেবে নিজ কন্যাদেরকে গুন্ডাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু দুশ্চরিত্রের ঐ সব লোক সমূহ সব কিছু অগ্রাহ্য করলো। এবং বললো আপনিতো জানেন, আমরা কি চাই? লূত (আঃ) বিব্রত অবস্থায় পড়লেন। কিভাবে রক্ষা পাবেন, তাই চিন্তা করতে লাগলেন। তখন ফেরেশতারা গোপনে লূত (আঃ) এর কাছে নিজেদের পরিচয় দিলেন। এবং পরামর্শ দিলেন যে, আপনি আপনার পরিজন ও সঙ্গীদেরকে নিয়ে রাত্রে রাত্রেই এই দেশ ত্যাগ করবেন। ভোর হতে না হতেই এই দেশের উপর আল্লাহর আযাব আসবে।

লূত (আঃ) ফেরেশতাদের কথানুযায়ী তার অনুসারীদের সাথে নিয়ে রাতেই শহরের বাইরে চলে গেলেন, সিরিয়ার উদ্দেশ্যে। অবশ্য লূত (আঃ) এর স্ত্রী ওখানেই রয়ে গেলেন। ভোরে এই এলাকায় ভয়›কর ভূকম্প, চালের তর্জন-গর্জন আরম্ভ হলো। উপর হতে প্রস্তর বর্ষণ হতে লাগলো। সমগ্র দেশকে উপরে তুলে সজোরে নিক্ষেপ করা হলো। প্রভাতেই সমগ্র দেশ ধ্বংস হয়ে ভূপৃষ্ট হতে পাপিষ্টদের চিহ্ন চিরতরে মুছে গেল। শুধু রইল কুৎসিৎ কল›েকর কালিমা রেখা। সবকিছু ধ্বংস হয়ে সম্পূর্ণ এলাকা সাগরে পরিণত হলো। যা আজও জর্দানের মানচিত্রে বিদ্যমান আছে। আল্লাহর গজবে পতিত অভিশপ্ত এই এলাকাটি বাংলায় মরু সাগর, ইংরেজীতে ও আরবীতে ‘বাহরে মাইয়েত’ নামে পরিচিত। এটি দৈঘ্যে ৭৭ কিলোমিটার (প্রায় ৫০ মাইল), প্রস্থে ১২ কিলোমিটারের কিছু উর্ধ্বে (প্রায় ৯ মাইল), গভীরতায় ৪০০ মিটার (প্রায় কোয়াটার মাইল)। পুরাতন ইতিহাসে এটি ‘লূত সাগর’ নামে আখ্যায়িত।
-----------------------------------------------------------------
তথ্য সূত্র ঃ আলকোরআন:
সূরা আ’রাফ, পারা ৮, রুকু ১৭, সূরা শোআরা, পারা ১৯ রুকু ১৩, ১৯, সূরা হুদ, পারা ১২ রুকু ৭,
পারা ২৭, রুকু ৯, পারা ২০, রুকু ১৬, কামাসুল কোরআন। ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২৩১।

প্রকাশঃ দৈনিক ইনকিলাব, (ইসলামী জীবন) ২৮ এপ্রিল, ২০০৯। সাপ্তাহিক মুসলিম জাহান, ০৮ এপ্রিল, ২০০৯।            
-------------------------------------------------------------------

By Khandaker Nazneen Sultana.
Journalist
reade more... Résuméabuiyad

শিশু ইসমাঈল (আঃ) ও যমযম কূপ

ইসমাঈল (আঃ) এর পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও মাতা হাজেরা (রাঃ)। জন্মের কিছুদিন পর আল্লাহর আদেশে হযরত ইব্রাহীম (আঃ), বিবি হাজেরা (রাঃ) ও শিশু পুত্র ইসমাঈল (আঃ) কে মক্কা নগরীর বাক্কা নামক স্থানে রেখে এলেন। বিবি হাজেরা (রাঃ) শিশু ইসমাঈল (আঃ) কে নিয়ে একটি গাছের নীচে আশ্রয় গ্রহন করলেন। তখন সেই এলাকায় কোন মানুষ ছিল না। পানিরও কোন ব্যবস্থা ছিল না। তাঁদের সাথে ছিল একটি থলিতে কিছু খুরমা খেজুর আর একটি মোশকে কিছু পানি।

বিবি হাজেরা (রাঃ) এই জন-মানবহীন মরুভূমিতে শিশু ইসমাঈলকে নিয়ে থাকতে প্রথমে ভয় পাচ্ছিলেন কিন্তু যখন শুনলেন আল্লাহর ইচ্ছা, তাঁদেরকে এভাবে থাকতে হবে। তখন আল্লাহর ইচ্ছা ও আশ্রয়ে বিবি হাজেরা (রাঃ) সন্তুষ্ট হলেন। আল্লাহর আশ্রয়ের উপর কোন আশ্রয়ই হতে পারে না। অতএব, শুকর আলহামদুলিল্লাহ।


হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আদরের স্ত্রী পুত্রকে রেখে সম্মুখে হাঁটতে লাগলেন। তারপর গিরি পথের বাঁকে পৌঁছে, এখন যেখানে কাবাগৃহ, সেখানে থামলেন। এবং কাবা গৃহের স্থানে মুখ করে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! আমি জন শূন্য মরুর বুকে তোমার ঘরের কাছে আমার পরিজনদের বসতি স্থাপন করে যাচ্ছি। এই উদ্দেশ্যে যে তারা তোমার এবাদত বন্দেগী ও নামায ভালোভাবে আঁকড়ে থাকবে। হে আল্লাহ আরও লোকদের মন এই জনশূন্য স্থানের প্রতি আকৃষ্ট করে দাও। যেন এখানকার জনশূন্যতা দূর হয়ে যায়। আর ফলফলারি ও খাদ্যদ্রব্য আমদানী করে পানাহারের সুব্যবস্থা করে দাও। যাতে তোমার নেয়ামত উপভোগ করে মানুষ তোমার শোকর গুজারী করে।

ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর গৃহে ফিলিস্তিনে ফিরে এলেন। মরুভূমির নির্জন প্রান্তরে বিবি হাজেরা (রাঃ) দু’একটি খুরমা খেজুর খেতেন ও পানি পান করতেন। আর শিশু পুত্র ইসমাঈল (আঃ) কে বুকের দুধ পান করাতেন। কিছু দিনের মধ্যেই পানি ফুরিয়ে গেল। তখন হাজেরা (রাঃ) নিজেও ভীষনভাবে তৃর্ষার্ত হলেন। এবং শিশু পুত্র আর বুকের দুধ পাচ্ছিল না। শিশু ইসমাঈল (আঃ) ক্ষুধা ও পিপাসায় ছটফট করে কাঁদতে লাগলেন। চোখের সামনে শিশুর ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে হাজেরা (রাঃ) পুত্রকে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝের নীচু স্থানে মাটিতে শুইয়ে রেখে, দৌড়ে সাফা পাহাড়ের ওপরে উঠলেন। এদিক ওদিক তাকাতে লাগলেন, কারো খোঁজ পাওয়া যায় কিনা। শিশুর চিৎকারে আবারও শিশু ইসমাঈল (আঃ) এর কাছে ছুটে এলেন।

না, কোথাও পানি পেলেন না। বাচ্চার কান্নাও থামছে না। আবার মারওয়া পাহাড়ের ওপরে উঠে দেখতে লাগলেন, কাউকে দেখা যায় কিনা। কিন্তু না কাউকেই দেখা গেল না। বাচ্চার চিৎকারে আবারও বিবি হাজেরা (রাঃ) শিশু পুত্র ইসমাঈল (আঃ) এর কাছে ছুটে এলেন। এভাবে, একবার সাফা পাহাড় ও একবার মারওয়া পাহাড়ে ছুটতে লাগলেন। আর বারবার নতুন আশাায় বুক বাঁধছিলেন, হয়তো কাউকে দেখা যাবে। হয়তো পানির কোন বন্দোবস্ত হবে। এভাবে সাফা ও মারওয়া পাহাড় সাত বার দৌড়ালেন। হঠাৎ একটি শব্দ শুনলেন। গভীর মনোযোগ সহকারে ঐ শব্দের প্রতি ধ্যান দিলেন এবং আবারও শব্দ শুনলেন।

বিবি হাজেরা (রাঃ) বললেন, কার শব্দ শোনা যাচ্ছে? কেউ কি সাহায্য করবেন? তবে অনুগ্রহ পূর্বক সামনে আসুন। এমন সময় শিশু ইসমাঈল (আঃ) এর সামনে একজন ফেরেস্তাকে দেখতে পেলেন। তিনি হযরত জিব্রাইল (আঃ)। শিশু ইসমাঈল (আঃ) শুয়ে কাঁদার সময় যেখানে পা দিয়ে আঘাত করছিলেন, জিব্রাইল (আঃ) পা দিয়ে সেখানটায়  আঘাত করে গর্ত করলেন। তখন সেখান হতে পানি উথলে উঠতে লাগলো।

বিবি হাজেরা (রাঃ) বিস্মিত হলেন ও আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে শুকরিয়া আদায় করলেন। জিব্রাইল (আঃ) এর কথামতো হাজেরা (রাঃ) তাড়াতাড়ি পানির চর্তুদিকে মাটি দিয়ে হাউজের ন্যায় বাঁধ দিলেন। তারপর মোশকে পানি ভরে নিলেন। নিজে পানি খেলেন ও শিশুকে দুধ খাওয়ালেন।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্নিত, নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, ”ইসমাঈলের মাতাকে আল্লাহ রহম করুন । তিনি পানির চর্তুদিকে বাঁধ না দিলে তা কূপ না হয়ে প্রবাহমান ঝরনা হয়ে যেত।”

এই কূপটিই এখনকার যমযম কূপ। আল্লাহর বিশেষ কুদরতে সৃষ্ট এই কূপের পানিতে অশেষ রহমত। তাই মক্কা নগরীতে শুধু এই কূপের পানি খেয়েই একজন মানুষ সুস্থ থাকতে পারে। যমযম কূপের পানি অত্যন্ত সুস্বাদু।

উৎপত্তির পর হতে এ পানি কখনই শেষ হয়নি এবং ভবিষ্যতেও শেষ হবে না। ইনশা-আল্লাহ। কূপের চারপাশে বিবি হাজেরা (রাঃ) খুরমা খেজুরের বিচি লাগালেন ও তাতে পানি দিলেন। ধীরে ধীরে অনেক খেজুরের গাছ হলো। তাইতো মক্কা নগরী আজ খুরমা খেজুরে এত প্রসিদ্ধ।

ফেরেস্তাকে জিব্রাইল (আঃ) যাবার সময় তাঁদেরকে এই শান্তনা বানী শোনালেন যে, যমযম
কূপের পাশেই পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও পুত্র ইসমাঈল (আঃ) আল্লাহর ঘর পূননির্মান করবেন। তাই তাদের ভয় পাবার কিছু নেই। আল্লাহর ঘর নির্মাতাদের আল্লাহ নিজেই হেফাজত করে রাখবেন। তখন সেখানে আল্লাহর ঘরের চিহৃ। স্বরূপ একটি উঁচু টিলার মত ছিল। তাও পাহাড়ী ঢলের স্রোতে ভেঙ্গে যাচ্ছিল প্রায়।

কিছুদিন পর জুরহুম গোত্রের একটি কাফেলা ঐ এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ  তারা দেখলেন কতগুলো পাখি কিছুকে কেন্দ্র করে উড়ছে। তারা জানতেন যে, পাখি পানির সন্ধান পেলেই এভাবে ওড়ে। তাদের অনুমান সত্য হলো। কাছে এসে দেখলেন, পাখিগুলো
যমযম কূপ কে কেন্দ্র করে উড়ছে। পানি পেয়ে কাফেলার লোকজন ভীষন খুশী হলেন।

তারপর বিবি হাজেরা (রাঃ) এর অনুমতিক্রমে তারা সেখানে বসবাস করতে লাগলেন। তাদের পরিচিত লোকদেরও খবর দিয়ে আনলেন। তারাও সেখানে বসতি  স্থাপন করতে লাগলেন।এভাবেই যমযম কূপ, শিশু পুত্র ইসমাঈল (আঃ)ও বিবি হাজেরা (রাঃ) এর উছিলায় মক্কা নগরী আবাদ হয়ে গেলো। শিশু ইসমাঈল (আঃ) সকলের সাথে হেঁসে খেলে বেড়ে উঠতে লাগলেন। নবী হযরত ইব্রাহীম (আঃ)এর দোয়া পুর্ন হলো। আল্লাহর সকল ইচ্ছার পরিপূর্নতা পেলো।
------------------------------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র:
আলকোরআন: পারা; ১৩, রুকু-১৮, পারা; ১, রুকু-১৫। বুখারী শরীফ; হাদীস নং ১৬৩৫।

প্রকাশ ঃ দৈনিক ইনকিলাব; ১৯ জুলাই ২০০৯। 
-----------------------------------------------------------------------------------   By Khandaker Nazneen Sultana
    Journalist

reade more... Résuméabuiyad

যুলকার নাইন, এস্কান্দার ও সেকান্দরের প্রাচীর


যুলকার নাইন একজন খোদাভক্ত ও ন্যায়পরায়ন বাদশাহ ছিলেন। তাঁর প্রতি আল্লাহ তা’য়ালার বিশেষ বানীও এসেছিল বলে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে। নবী করীম (সাঃ) এর যুগের প্রায় আড়াই বৎসর পূর্বে ইব্রাহীম (আঃ) এর সময় এস্কান্দার নামে এই বাদশাহ ছিলেন। পবিত্র কোরআনে বর্নিত গুনাবলী অনুযায়ী সেই এস্কান্দর নামক বাদশাহ ও যুলকার নাইন বাদশাহ একই ব্যক্তি।


 বাদশাহ যুলকার নাইন এর নীতি ছিল, যে অন্যায়কারী তথা কাফের থাকবে, তাকে ইহজগতে শাস্তি দেয়া হবে। তারপর মৃত্যুর পর আল্লাহও তাকে কঠোর শাস্তি দেবেন। আর যে ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে, সে এই পৃথিবীতে পাবে ভালো ব্যবহার ও উত্তম পুরস্কার আবার পরকালেও তার জন্য রয়েছে অত্যান্ত আকর্ষনীয় প্রতিদান।

একবার যুলকার নাইন এক অভিযানে দুটি পর্বত প্রাচীরের মধ্যস্থ এক স্থানে পৌঁছালেন। তখন সেই পর্বতদ্বয়ের পাদদেশে এক মানব সমাজ পেলেন, যারা তার ভাষা বুঝতো না। দোভাষীর মাধ্যমে তারা জানালো যে, ‘ইয়াজুজ মাজুজ নামে এক জাতি প্রায়ই তাদের অঞ্চলে এসে ভীষন ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি প্রাচীর তৈরী করে দিলে তাদের অনেক উপকার হবে।  যুলকার নাইান বলল, ’আল্লাহ আমাকে ধন-দৌলতের যে সামর্থ দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। তোমরা শুধু শ্রমশক্তি দ্বারা আমাকে সাহায্য করো। তবে তোমাদের ও তাদের মাঝে একটি মজবুত প্রাচীর তৈরী করে দেই’।

তারা বড় বড় লোহার পাত দিয়ে পর্বত দুটির মাঝের গিরি পথটি ভরাট করে পাহাড়ের সমান করলো। তরপর আগুন জ্বালালো। যখন লোহাগুলো প্রচন্ড উত্তপ্ত হলো তখন গলিত তামা সেই লোহাগুলোর উপর ঢেলে দিল। ভীষন মজবুত ও উচু এই প্রাচীরটি ইয়াজুজ- মাজুজের পক্ষে উপরে চড়ে অতিক্রম করা সম্ভব হবে না। আবার ভেঙ্গে পথ সৃষ্টি করাও সম্ভব নয়। তবে কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে আল্লাহর হুকুমেই ইয়াজুজ - মাজুজ প্রাচীরটি ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারবে।

অষ্ট্রেলিয়ার উত্তর পূর্ব সীমান্তে সমুদ্র উপকূলে এক প্রাচীন প্রাচীর আছে। যা লম্বায় এক হাজার মাইলেরও বেশী। চওড়া বারো মাইল। উঁচু এক হাজার ফুট। এর উপর অনেক রকম জীব জন্তু বাস করে। বৈজ্ঞানিকরা এখনও এর তথ্য অনুসন্ধান করছে। অনেকের ধারনা এই প্রাচীরটিই যুলকারনাইনের দ্বারা প্রস্তুত লোহা ও তামার প্রাচীর। এর নামই যুলকার নাইন, এস্কান্দার বা সেকান্দরের প্রাচীর।

নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ইয়াজুজ মাজুজ দল প্রতিদিন এই প্রাচীর খনন করে। সারাদিন খনন করার পর যখন তা ভেদ করতে আর অল্প একটু বাকী থাকে তখন দলপতির আদেশে তারা কাজ বন্ধ করে চলে যায়। সেই তখন থেকে এখন পর্যন্ত তারা এরূপ কাজ করে আসছে। যখন কেয়ামতের কাছাকাছি সময় আসবে, তখন সারা দিনের কাজ শেষে দলনেতা বলবে, ‘ইনশাহ-আল্লাহ আগামীকাল আমরা বাকীটুকু খনন করবো। তখন আল্লাহর কুদরতে ও ইনশাহ-আল্লাহর বদৌলতে খননকৃত স্থান ভরাট হবে না। পরদিন তারা অতি সহজেই অবশিষ্ট খননকার্য সমাধা করে, তা ভেদ করে প্রবল স্রোতের ন্যায় সবাই বেরিয়ে আসবে। কোরআনের ঘোষনা তখন বাস্তবে পরিণত হবে।

আল্লাহ তা’য়ালার অনেক সৃষ্টি এখনও মানুষ আবিস্কার করতে পারেনি। যেমন: যুলকারনাইন নির্মিত প্রাচীর। শাদ্দাদ কর্তৃক নির্মিত বেহেশত ও দজ্জাল। আল্লাহর কুদরতে এখনও এসব সাধারন দৃষ্টি হতে লুকায়িত রয়েছে। তবে আল্লাহর ইচ্ছা ও ক্ষমতায় কেউ কেউ এসব গোপন প্রাচীর বেহেশত ও দজ্জাল দেখেছিলেন। হাদীসে এর প্রমাণও মেলে।

একদা এক সাহাবী নবী করীম (সাঃ) এর খেদমতে এসে আরজ করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি যুলকার নাইনের প্রাচীর দেখেছি।’ লোকটির বর্ননা অনুযায়ী প্রাচীরটি ডোরা বিশিষ্ট চাদরের ন্যায়। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঐ সাহাবীর বক্তব্য সমর্থন করে বললেন, ‘বাস্তবিকই তুমি তা দেখেছ।

 মুসলিম শরীফের হাদীস অনুযায়ী দজ্জালের জন্ম বহু পূর্বেই হয়েছে। কিন্তু তাকে সাধারণ দৃষ্টি আবিস্কার করতে পারেনি। তামীমে দারী (রাঃ) নামে এক সাহাবী তাকে দেখেছিলেন। কেয়ামত নিকটবর্তী হলে দজ্জালেরও আর্বিভাব হবে।

আবার নবী করীম (সাঃ) এর ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী মোয়াবিয়া (রাঃ) এর শাসন কালে এক ব্যক্তি নিজ উট হারিয়ে তালাশ করতে করতে হঠাৎ শাদ্দাদের বেহেশত দেখতে পেয়েছিলেন। জ্বীনদের দ্বারা এরূপ অনাবিস্কৃত স্থানে মানুষের ভ্রমন অনেক ক্ষেত্রেই ঘটেছে। তাই এ ঘটনাগুলো হয়তো আল্লাহর রহস্যময় কুদরতে জ্বীনদের দ্বারা হঠাৎ ভ্রমণের ব্যবস্থা হয়েছিল।
---------------------------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র:
আলকোরআন: পারা; ১৭, রুকু-৭। বুখারী শরীফ; হাদীস নং ১৬২৬, ১৬২৭, মুসলিম শরীফ, ইবনে মাজা শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ফাতহুল বারী, তফসীরে আজীজী।
--------------------------------------------------------------------------------
প্রকাশ ঃ দৈনিক ইনকিলাব; ৯ ফেব্র“য়ারী ২০০৯।  
-----------------------------------------------------------------------------------

By
Khandaker Nazneen Sultana
Journalist

reade more... Résuméabuiyad

My Love




 

By Nazneen Payel . Poet, Journalist
reade more... Résuméabuiyad

Can You Find Happiness By Taking Drugs?

For the last couple of weeks, I have focused my literature review (which never stops)on the question whether one can find happiness by taking drugs. The answer seems obvious: No. But why? Aren't drugs "sources of pleasure"? Let's briefly talk about the process of addiction. Whenever we do something, there are chemical reactions in our brains and electrical pathways are created on the surface of our brain. From a purely scientific perspective, happiness is what happens when certain chemicals are released in the brain. These chemicals can be released by taking certain substances (like alcohol, cigarettes, soft drugs or hard drugs)or by behaving in a certain way (like sexual relationships, shopping, working hard and being rewarded by the boss and so forth). Such behaviour creates stronger pathways in the brain. Repetition of such behaviour leads to deeper pathways. Ultimately, addiction arises when the structure of the brain (it's anatomy) and the way it is organized (physiology)changes so that the anatomy and physiology of an addict's brain is different from that of a normal person. Typically, addiction leads to a harmful way of living where short-term pleasure is always followed by long-term pain. The funny thing is that we now know - scientifically - that such an approach to finding happiness is totally counter-productive. We also know - scientifically - that one of the best ways to find happiness is through developing a spiritual connection with God. Andrew Newberg and Robert Waldman in their book "How God Changes Your Brain" tells of research in which brain scans of people who did not meditate (i.e. "baseline scans")were compared to brain scans of people who did meditate (i.e. "meditation scans"). They found that meditation and prayer did much more to stimulate the parts of the brain that leads to internal peace of mind. However, there is ONE CONDITION. Andrew Newberg and Robert Waldam found that when people perceived God as being a tyrant, the brain released chemicals that lead to a situation of fear and anti-social behaviour. When people perceived God as being loving, kind and merciful, the brain released chemicals that lead to happiness and pro-social behaviour.
reade more... Résuméabuiyad

আল্লাহ্ কতৃক মৃতকে জীবন দান




মহান আল্লাহ তা’য়ালার অপার শক্তি। তিনি জীবন দান করেন। মৃত্যু ঘটান। আবার মৃতকে পূনরায় জীবিত করতে পারেন। একদা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আবদার করলেন, হে আল্লাহ আপনি কিভাবে মৃতকে জীবিত করেন, দেখার খুব ইচ্ছে আমার। আল্লাহ তা’য়ালা বললেন, আচ্ছা, তবে চারটি পাখী সংগ্রহ করুন এবং পেলে পুষে এদের সাথে ভালোভাবে  পরিচিত হন। অতপর: এই পাখীগুলোকে জবাই করে টুকরো করে এক একটার এক এক অংশ এক এক পাহাড়ে রেখে আসুন। তারপর ঐ পাখীগুলোকে ডাকুন, দেখবেন আপনার চোখের সামনে প্রত্যেকটি পাখীর বিভিন্ন অংশ একত্রিত হয়ে পুনরায় জীবন লাভ করে আপনার কাছে দৌড়ে আসবে। আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান, সুকৌশলী, আল্লাহ সবই পারেন- মনে সর্বদাই এই বিশ্বাস রাখতে হবে।

আল্লাহর পরামর্শমতো ইব্রাহীম (আঃ) চারটি পাখি সংগ্রহ করলেন, এগুলোকে জবাই করে পালক উপড়িয়ে ফেললেন এবং টুকরো টুকরো করলেন । তারপর কয়েক ভাগে ভাগ করে এক এক ভাগ এক এক পাহাড়ে রেখে এলেন। পাখিগুলোর মাথা ইব্রাহীম (আঃ) নিজ হাতে রেখেছিলেন। তারপর আল্লাহর কথামতো ঐ পাখিগুলোকে ইব্রাহীম (আঃ) ডাকলেন। তখন দেখলেন, প্রতিটি পাখীর পালক উড়ে এসে একটি অপরটির সাথে মিলিত হচ্ছে। রক্তের কণাগুলো অপর রক্ত কণাগুলোর সাথে মিলিত হচ্ছে। গোশতের এক একটা অংশ অপর অংশের সাথে মিলিত হচ্ছে। এইরুপে প্রতিটি পাখির নিজ নিজ অংশগুলো একত্রে মিলিত হলো। তারপর পাখিগুলো হেঁটে হেঁটে ইব্রাহীম (আঃ) এর হাতে রাখা মাথাগুলোর সাথে মিলিত হবার জন্য এগিয়ে এল। ইব্রাহীম (আঃ) একটার দেহের সামনে অপর পাখির মাথা রাখলেন, মিলিত হল না। সব দেহগুলো নিজ নিজ মাথার সাথে খুব সহজেই মিলে গেল। ইব্রাহীম (আঃ) এর মনের ইচ্ছা পূরন হলো। তিনি নিজ চোখে দেখলেন কিভাবে আল্লাহর অপার শক্তিতে মৃতও জীবিত হয়ে যায়।

আল্লাহ্ তা’য়ালা সর্বক্ষমতার অধিকারী। তার জন্য কোন বিষয়ই অসম্ভব নয়। তিনি যা ইচ্ছে করেন, বিনা বাঁধায় তা সম্পন্ন হয়। আল্লাহ তা’য়ালা হেকমত ওয়ালা বিজ্ঞ। তাঁর হেকমত ও বিজ্ঞতা প্রকাশ পায় তাঁর বানীতে ও কাজে।তাঁর নিয়ম কানুন ও ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে আর একটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়।

একদিন নবী করীম (সাঃ) তাঁর পূর্ববর্তী উম্মতের একজন লোকের কথা আলোচনা করলেন। লোকটি বিপুল পরিমান ধন সম্পদের অধিকারী ছিলেন। বৃদ্ধ বয়সে লোকটি তার পুত্রদেরকে ডেকে বললেন, তোমরা তোমাদের পিতাকে কেমন মনে কর? সন্তানরা বললো, ’অতি উত্তম’। লোকটি বললো , তোমাদের পিতা এমন কোন কাজই করেনি যা আল্লাহর দরবারে ভালো কাজ হিসাবে গৃহিত হবে। আমি আশংকা করছি, মৃত্যুর পর আল্লাহ আমাকে অবশ্যই আযাব দিবেন। তাই মৃত্যুর পর আমার দেহ তোমরা আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে। আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেলে তা পেষন করবে। তারপর প্রবল ঝড়ের দিনে তার অর্ধেকটা সমুদ্রে এবং অর্ধেকটা বাতাসে উড়িয়ে দেবে। পুত্ররা পিতার ইচ্ছা অনুযায়ী তাই করলো।

অতপর: আল্লাহর নির্দেশে হলো ‘হয়ে যাও’। তৎক্ষনাত ঐ ব্যক্তি জীবিত হয়ে দাঁড়ালো। আল্লাহ তা’য়ালা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এরূপ করলে কেন? সে উত্তর দিল, হে আল্লাহ আমি একমাত্র আল্লাহ আপনার ভয়ে ভীত হয়ে এরূপ করেছিলাম। মহান আল্লাহ তা’য়ালার মায়া হলো। আল্লাহ লোকটির সব গুনাহ মাফ করে দিলেন।     

আল্লাহ তা’য়ালা অতি মহান, অত্যন্ত দয়াল। তাই, আমাদের সব সময়ই উচিৎ আল্লাহকে ভয় করা। শ্রদ্ধা করা, ভালোবাসা। যা কিছু চাইবার, তা আল্লাহর কাছে চাওয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্মরণ করে কাঁদবে। সে কেয়ামতের কঠিন হাশরের মাঠে আল্লাহর রহমতের ছায়াতলে থাকবে। ইনশাআল্লাহ।  
-------------------------------------------------------------------
তথ্যসুত্র ঃ
আলকোরআন:
পারা; ৩ রুকু ৩, পারা; ১৭, রুকু ৭ । বুখারী শরীফ হাদীস নং ১৬২৮,২৪৫০।

প্রকাশ ঃ পাক্ষিক ইতিকথা, ১৫ জানুয়ারী, ২০০৯। সাপ্তাহিক মুসলিম জাহান, ১১ ফেব্র“য়ারী, ২০০৯ ।  
------------------------------------------------------------------

By 
Khandaker nazneen Sultana
Journalist

reade more... Résuméabuiyad

হযরত নূহ (আঃ) এর আশ্চর্য নৌকা



পৃথিবীতে হযরত আদম (আঃ) এর পর তাঁর পুত্র শীষ (আঃ) নবুয়ত প্রাপ্ত হন। তারপর আসেন ইদ্রীছ (আঃ)। অনেকের মতে নূহ (আঃ) ছিলেন ইদ্রীছ (আঃ) এর পৌত্র। হযরত নূহ (আঃ) চল্লিশ বৎসর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন। তিনি দীর্ঘ ৯৫০ (নয়শত পঞ্চাশ) বৎসর পর্যন্ত চেষ্টা ও পরিশ্রম করে তাঁর ১৬০ (এক শত ষাট) জন উম্মতকে আল্লাহর পথে আনতে পেরেছিলেন। এর মধ্যে ৮০ (আশি) জন ছিলেন পুরুষ ও ৮০ (আশি) জন মহিলা। আর কেউ ঈমান আনলো না। একসময় আল্লাহ নিজেই নূহ (আঃ) কে অহী মারফত জানিয়ে দিলেন যে, তাঁর আর অন্য কোন উম্মতই ঈমান আনবে না।

হযরত নূহ (আঃ) এর যামানায় এত বেশী লোক আল্লাহর অবাধ্য হয়ে পড়ে যে, আল্লাহ সব কাফের দের ধবংস করার সিদ্ধান্ত নিলেন। আল্লাহ নূহ (আঃ) কে জানিয়ে দিলেন যে, তিনি যেন তাঁর ঈমানদার বান্দাদের বাঁচার জন্য একটি বড় নৌকা তৈরী করে তাতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। একদিন দেখলেন মাটি ফেটে ও চুলার ভেতর থেকে পানি উঠছে, তখন নূহ (আঃ) তাঁর ঈমানদার বান্দাদের সাথে নিয়ে নৌকায় উঠে গেলেন। সাথে নিলেন সমস্ত জীব-যন্তু ও পশু-পাখী এক জোড়া করে। সমস্ত গাছের বীজও নিলেন।

 আকাশ হতে পড়তে লাগলো প্রবল বৃষ্টিপাত। মাটির নীচ হতে উঠতে লাগলো প্রচন্ড বেগে পানি। একনাগাড়ে ৪০ দিন এরূপ চললো। পৃথিবীর বাড়ী-ঘর গাছ-পালা পাহাড়-পর্বত সব কিছুই পানির প্রবল স্রোতে ধবংস হয়ে গেলো। শুধুমাত্র নূহ (আঃ) এর জাহাজ পানির উপরে ভাষতে লাগলো।
হযরত নূহ (আঃ) এর চার ছেলে ছিল। তাদের নাম হাম, সাম, ইয়াফেছ ও কেনান। প্রথম তিন জন ঈমানদার ছিলেন। তাঁরা তার পিতার সাথে জাহাজে আরোহন করেছিলেন। ছোট ছেলে কেনান ও তার মাতা ছিল কাফের। কেনান জাহাজে আরোহন না করে উঁচু পর্বতের দিকে ছুটলো। কিন্তু জলোচ্ছাস তাকেও ডুবিয়ে নিয়ে গেলো।

চল্লি¬শ দিন পর তুফান, বৃষ্টিপাত ও জলোচ্ছাস থামলো। হযরত নূহ (আঃ) এর জাহাজ ‘জুদী’ নামক পর্বতের উপর থামলো। আল্ল¬াহ্র আদেশে নূহ (আঃ) তাঁর ঈমানদার বান্দাদের নিয়ে জাহাজ থেকে নামলেন। তখন সমস্ত পৃথিবী আবার নতুনভাবে আবাদ হলো। এই হিসেবে হযরত নূহ (আঃ) কে আদমে ছানী বা দ্বিতীয় আদম বলা হয়। বর্তমানে বিশ্বের সমস্ত লোকই হযরত নূহ (আঃ) এর বংশধর।
---------------------------------------------------------------------------------

তথ্যসুত্র ঃ
আলকোরআন:
সূরা নূহ: পারা; ২৯, সূরা আরাফ: পারা; ৮ রুকু ১৫, সূরা মোমেনুন: পারা; ১৮ রুকু ২,
পারা; ২৩  রুকু ৭, পারা; ১২  রুকু ৩,৪,১০, পারা; ১১ রুকু ১৩, পারা; ২৮  রুকু ২০,
বোখারী শরীফ হাদীস নং ১৬২৪।

প্রকাশঃ সাপ্তহিক মুসলিম জাহান; ০২ ফেব্র“ুয়ারী, ২০০৯।
---------------------------------------------------------------------------------

 
By 
 Khandaker Nazneen Sultana
 Journalist
reade more... Résuméabuiyad

হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া (রাঃ) এর ক্ষমা প্রার্থনা, শয়তানের মন্ত্রণা



পৃথিবীর সর্বপ্রথম নবী হযরত আদম (আঃ) আমাদের সবার আদি পিতা। আল্ল¬াহ তা’য়ালা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ হিসেবে প্রথমে হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন। তারপর তাঁকে পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের নাম, ব্যবহার ও সালাম শিক্ষা দিলেন। এছাড়াও তাঁকে দিলেন বিচার, বুদ্ধি ও সাধারন জ্ঞান।

মহান আল্ল¬াহ তা’আলা ফেরেশতাদের ডেকে বললেন ‘তোমরা আদম (আঃ)-কে সিজদা কর’। সব ফেরেশতাই আল্লাহর হুকুম পালন করলেন, কিন্তু ইবলিস আদম (আঃ)-কে নিকৃষ্ট মনে করে আল্ল¬াহর আদেশ অমান্য করেছিল। এতে আল্ল¬াহ রাগ করে ইবলিসকে তাঁর সান্নিধ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। ইবলিস অভিশপ্ত হয়ে গেল। তখন থেকে ইবলিসের একমাত্র কাজ হলো মানুুষের ক্ষতি করা। এজন্যই শয়তান ইবলিস মানুষের পরম শত্র“। আমাদের সবার উচিত ইবলিসের শয়তানী থেকে সবসময় নিজেকে রক্ষা করে চলা ও সকল পাপ থেকে দূরে থাকা।

আল্ল¬াহ আদম (আঃ)-এর পাঁজরের বাঁকা হাড় হতে হযরত হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন। তারা দু’জনে পরম শান্তিতে বেহেশতে বাস করতে লাগলেন । বেহেশত অত্যন্ত সুন্দর আকর্ষণীয় ও আরামের জায়গা। সেখানে কোন দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা, রোগ-বালাই নেই। অভাব-অভিযোগ নেই। বেহেশতের ফুল বাগানে হরেক রকম সুন্দর সুন্দর সব ফুল ফুটে আছে। ফল গাছ পরিপূর্ণ পাকা ফলে। গাছের নিচে পড়ে থাকে পাকা পাকা টসটসে ফল। চারদিকে কোন নোংরা ময়লা-আবর্জনা নেই। পাহাড়ি ঝরনা বইছে ছল- ছল কল-কল করে। কি স্বচ্ছ তার পানি! উপর থেকে তাকালে পাতালের নুড়ি পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা যায়। কি সুমিষ্ট সে পানি খেলে প্রাণ ভরে যায়।

এই সুন্দর বেহেশতে আদম (আঃ) ও বিবি হওয়া (আঃ)-এর কোন বাঁধা ছিল না। আল্ল¬াহ তাঁদের শুধু একটি গাছের কাছে যেতে নিষেধ করলেন। বললেন,‘বেহেশতে তোমরা যেখানে ইচ্ছে সেখানে ঘুরে বেড়াও, যখন যা ইচ্ছে তা-ই খাও। তবে বিশেষ গাছ, এ গাছের কাছে যেও না। এর ফল খেও না। তাহলে তোমাদের নিজেদেরই ক্ষতি হবে।’

শয়তান হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হওয়া (আঃ)-কে বিভিন্নভাবে ধোঁকা দিতে লাগল, যাতে তারা আল্ল¬াহর নিষেধ অমান্য করেন। শয়তান তাঁদের মন্ত্রণা দিল যে, আল্ল¬াহর কসম, তোমরা এই বৃক্ষের ফল খেলে আজীবন বেহেশতে থাকতে পারবে। তাঁরা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে গেলেন এবং এক সময় ওই বৃক্ষের ফল খেয়ে ফেললেন।

নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার সাথে সাথে তাঁদের শরীরের বেহেশতের পোশাক খুলে গেল। তাঁরা দু’জনই পাতা-লতা দিয়ে নিজেদের ঢাকতে চেষ্টা করতে লাগলেন। আল্ল¬াহ শান্তি স্বরূপ তাঁদের বেহেশেত ত্যাগ করার নির্দেশ দিলেন। হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া (আঃ) দু’জনই নিজেদের ভুল বুঝতে পারলেন। অপরাধ স্বীকার করে তাঁরা আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে ক্ষমা চাইতে লাগলেন।

এতে আল¬াহর দয়া হলো। তিনি তাঁদের ক্ষমা করে দিলেন। তবে তাঁরা আর বেহেশতে থাকতে পারলেন না। তাঁদের এই পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়া হলো যে, পৃথিবীতে শয়তানের যাবতীয় কুমন্ত্রণা হতে দূরে থেকে সমস্ত পাপ হতে বিরত থেকে ভাল ও পূণ্যের কাজ করলে আবার আদম (আঃ) ও তার বংশধর বেহেশতে যেতে পারবে। তবে তা কেয়ামত ও শেষ বিচারে সমস্ত পাপ-পূণ্যের হিসাব-নিকাশের পর। সেই থেকে এই আমরা আদম জাতি এখনও এই পৃথিবীতে বসবাস করছি।

শয়তান এখনও আদম সন্তানের পেছনে সর্বক্ষণ লেগে আছে। সে মানুষের মনে লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ তৈরী করে। ইবলিস আদম (আঃ)-কে সেজদা না করে অপরাধ করে ক্ষমা চায়নি, তাই সে অভিশপ্ত। আর হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) নিষিদ্ধ ফল খেয়ে যে অপরাধ করেছেন তার জন্য ভীষণভাবে আনুতপ্ত হয়ে কান্নাকাটি করে, আল্ল¬াহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে পুনরায় আল্ল¬াহর সুন্তুষ্টি লাভ করেছেন। তাই আমাদের উচিত যে কোন অন্যায় ভুলভ্রান্তি ও পাপ কাজ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আল্ল¬াহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা ও ভবিষ্যতে সেসব ভুল ও পাপ হতে সম্পূর্ণ রুপে দূরে থাকা
------------------------------------------------------------------
তথ্যসুত্র ঃ
আলকোরআন:
পারা; ১  রুকু ৪, পারা; ৪ রুকু ১, পারা; ৫ রুকু ৮, পারা; ৮ রুকু ১,৯,১০, পারা; ৯ রুকু  ১২, ১৪, পারা; ১৪ রুকু ৩, পারা; ১৬ রুকু ১৬, পারা; ২২ রুকু ১৩, পারা; ২৩ রুকু ১৫, বোখারী শরীফ; হাদীস নং  ১৬২২।
----------------------------------------------------------------
প্রকাশঃ দৈনিক ইনকিলাব; ১৭ অগ্রায়ন ১৪১৫, ১ ডিসেম্বর ২০০৮। 

         সাপ্তহিক মুসলিম জাহান; ০৭ জানুয়ারী, ২০০৯।
----------------------------------------------------------------
                                 By 

Khandaker Nazneen Sultana,
Journalist.
reade more... Résuméabuiyad

প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ)এর সৃষ্টি

মহান আল্ল¬াহ তা’আলা এই পৃথিবীতে বহু সংখক নবী ও রসূল পাঠিয়েছেন। সমস্ত নবীদের মধ্যে হযরত আদম (আঃ) সর্ব প্রথম নবী। তিনি মানবজাতির আদি পিতা।
সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, হযরত আদম (আঃ) এর মা বাবা কেউই ছিলেন না। তাঁকে আল্ল¬াহ তা’লা নিজ কুদরতের সাহায্যে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।


বিশ্বজগতকে আল্ল¬াহ তা’আলা পূর্বেই সৃষ্টি করেছেন। তারপর তৈরী করেছেন ফেরেশতাদের। ফেরেশতাদেরা হলেন নূর বা আলোর তৈরী। তাঁরা অত্যন্ত পবিত্র। সমস্ত পাপ, পণি‹লতা, নাফরমানি ও মন্দ হতে মুক্ত। তাঁরা অত্যন্ত উন্নতমানের রোবটের ন্যায়। যে ফেরেশতা যে কাজের জন্য নিয়োজিত, উনি সে কাজই করতে থাকেন। আল্ল¬াহ্র হুকুমের বিন্দুমাত্র বরখেলাপ করাও তাঁদের স্বভাব বিরুদ্ধ। তাঁরা সর্বদা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্ল¬াহ তা’আলার ফর্মাবরদারী, আজ্ঞাবহনকারী ও তাঁর এবাদত বন্দেগী, প্রশংসা ও মহিমা জপ করে থাকেন। এটাই তাঁদের সৃষ্টিগত স্বভাব।

একসময় সৃষ্টিকর্তা মহান আল্ল¬াহ তা’আলার ইচ্ছে হল দুনিয়াতে একজন খলিফা বা প্রতিনিধি সৃষ্টি করবেন। তিনি তাঁর ইচ্ছার কথা ফেরেশতাদের কাছে প্রকাশ করলেন। তখন ফেরেশতারা বললেন,   ’আপনি কি দুনিয়াতে এমন জাতি সৃষ্টি করতে চান, যারা সেথায় ফেতনা-ফাসাদ ও খুন- খারাবী করবে? অথচ আমরাইতো আপনার মহিমা জপ ও পবিত্রতা বয়ান করে থাকি’। আল্ল¬াহ তা’আলা বললেন, ‘আমি যা জানি, তোমরা তা জান না।’

মূলত: আল¬াহ্র ইচ্ছে ছিল তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি সৃষ্টি করা। কারন, ফেরেশতাদের মাঝে আল্ল¬াহ  তা’আলা খেলাফত বা প্রতিনিধিত্বের যোগ্যতা দেননি। সে লক্ষেই তিনি আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করতে উদ্দ্যোগী হলেন।

ভূমন্ডলের বিভিন্ন অংশ হতে ভিন্ন ভিন্ন রকমের মাটি- (যেমন: লাল, সাদা, কাল, নরম, শক্ত, ভালো, মন্দ) একটু একটু নিলেন। সে মাটিকে প্রথমে কুমারের মাটির মতো চটচটে আঠালো করা হলো, তারপর শুকানো হলো। মাটি যখন পূর্ণ শুষ্ক হলো, আগুনে পোড়া মাটির পাত্রের ন্যায় করাঘাতে খন খন করে বেজে ওঠে, তেমন মাটি দিয়ে আল্ল¬াহ  তা’আলা বিশেষ কুদরতবলে আদম (আঃ) এর আকৃতি বা দেহ-কাঠামো তৈরী করলেন। তারপর আল্ল¬াহ  আদেশ করলেন ‘কুন- হয়ে যাও’ সঙ্গে সঙ্গে মাটির তৈরী আদম (আঃ) জীবন্ত হয়ে গেলেন। 

আল্ল¬াহ জ্বীনদের তৈরী করেছেন আগুন দিয়ে। আর মানুষকে তৈরী করেছেন দুর্গন্ধযুক্ত কাদা-মাটি হতে। আল্ল¬াহ আদম (আঃ) কে ষাট হাত লম্বা ( বর্তমানের সাধারন মানুষের হাতের মাপে ) মানুষ রুপে বানিয়েছিলেন । তাই বেহেস্তের সব মানুষও আমাদের আদি পিতার মতো ষাট হাত লম্বাই হবে।
-----------------------------------------------------------------------------------
তথ্যসুত্রঃ
আল-্কোরআন:
পারা; ২৪ রুকু ১৩, পারা; ১  রুকু ৪, পারা; ১৪ রুকু  ৩, পারা; ২৩ রুকু ১৪, পারা; ৩  রুকু  ১৪,পারা; ২৭ রুকু  ১১, পারা; ২১ রুকু  ১৪।
বুখারী শরীফ; হাদীস নং ১৬২০, মেশকাত শরীফ।
---------------------------------------------------------------------------
প্রকাশ ঃ  দৈনিক ইনকিলাব;
সোমবার, ২১ কার্তিক, ১৪১৫, ২৭ অক্টোবর ২০০৮।
----------------------------------

By 
Khandaker Nazneen Sultana, Journalist
reade more... Résuméabuiyad

সূক্ষ ভাবে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারন ক্রেতারা . মিষ্টির দাম =কাগজের প্যাকেটের দাম



সন্মানিত পাঠকগন, একটু লক্ষ্য করুন, মিষ্টির দোকানে কাগজের যে প্যাকেটে করে মিষ্টি বিক্রি করে সেই প্যাকেটের দামও মিষ্টির দামের সমান। অর্থাৎ,
মিষ্টির দাম =কাগজের প্যাকেটের দাম।


যখন মিষ্টির দাম ১৮০টাকা কেজি, তখন কাগজের প্যাকেটের কেজিও ১৮০ টাকা।
যখন মিষ্টির দাম ২২০ টাকা কেজি, তখন কাগজের প্যাকেটের কেজিও ২২০ টাকা।
যখন মিষ্টির দাম ৩২০ টাকা কেজি, তখন কাগজের প্যাকেটের কেজিও ৩২০ টাকা।
যখন মিষ্টির দাম ৪০০ টাকা কেজি, তখন কাগজের প্যাকেটের কেজিও ৪০০টাকা।
যখন মিষ্টির দাম ৫০০ টাকা কেজি, তখন কাগজের প্যাকেটের কেজিও ৫০০ টাকা।


সন্মানিত পাঠকগন, বুঝতেই পারছেন- কিভাবে করে একই কাগজের প্যাকেট ১৮০টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে আবার ৫০০টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টির দাম বাড়ছে, কাগজের প্যাকেটের দামও বাড়ছে। আর খুব সূক্ষ ভাবে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারন ক্রেতারা।

হক সুইটস আর বনফুলের বিক্রেতাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, ’ভাই, কি ব্যপার, আপনারা মিষ্টির  

দাম আর কাগজের প্যাকেটের দাম সমান নিচ্ছেন। এটা কি ঠিক?’

বনফুলের বিক্রেতারা বলল,’ এত কিছু বুঝিনা। আমাদের যেভাবে বলা হয়েছে, আমরা সেভাবেই মেপে দিছি।’
 আর হক সুইটস এর বিক্রেতারা বলল, ’আপা আমরা বছরের পর বছর এভাবেই মিষ্টি বিক্রি করে আসছি। আপনার পূর্বে কেউই কখনও এরূপ অভিযোগ করেনি।’

- সত্যি দারুন ব্যার্পা। আমার দেশের মিস্টির ক্রেতারা এতই সম্পদশালী যে, মিস্টি ও কাগজের প্যাকেট একই দামে কিনছেন, কিন্তু কোন অভিযোগ করছেন না। কিংবা এতই ব্যাস্ত যে, অভিযোগ করার সময় কোথায়?

আমার একটি ছোট্ট পরামর্শ:
প্রথমে প্যাকেটের ওজন মাপা হোক, পরে মিষ্টি মাপার সময় ঐটুকু মিষ্টি ব্যাল্যান্স করে নিলেই হলো।
সন্মানিত ক্রেতারা, প্যাকেটের মূল্য বাবদ আলাদা ১০/২০টাকা দিয়ে দিতে পারেন। তারপর
মিষ্টির ওজন ঠিক ভাবে মেপে নেবেন। লক্ষ্য রাখবেন, ১ কেজি মিষ্টি যেন ১ কেজিই হয়।

আর ি দোকানের সন্মানিত মালিকগনের দৃষ্টি আকর্ষন করছি,
আপনারা দয়া করে আপনাদের কর্মচারীদের বলে দেবেন যেন মিষ্টির দামে আর কাগজের প্যাকেট বিক্রি না করে। তাহলে আপনাদের জন্য কেয়ামতের মাঠেও হিসেব দেয়া সহজ হবে।
- আসুন আমরা সবাই মিলে বুদ্ধিমান হই, ঠিক কাজটি করি। মিষ্টির দামে কাগজের প্যাকেট না কিনি, না বিক্রি করি।
--------------------------------

By Khandaker Nazneen Sultana
Journalist
reade more... Résuméabuiyad

লুৎফর রহমান সরকার ঃ একজন আদর্শ শিক্ষাগুরু

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ সে সম্পর্কে আমরা কম-বেশী সবাই জানি। একজন আদর্শ শিক্ষকের যে গুণাবলীর কথা বলা হয়ে থাকে তা আজকাল আর তেমন চোখে পড়ে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে পড়ার সময় মাস্টার্সে  উঠে জানতে পারলাম জনাব লুৎফর রহমান সরকার, যিনি প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত, তিনি আমাদের ক্লাস নিবেন। ক্লাস ক্যাপ্টেন হিসেবে আমার উপর বাড়তি দায়িত্ব ছিল শিক্ষকদের কলা ভবনের সামনে থেকে নির্ধারিত ক্লাস পর্যন্ত নিয়ে আাসা।


 প্রথম দেখাতেই তাঁর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ব্যবহার আর চেহারায় অভিভূত হই। দিন যায় ওনার ক্লাসগুলি মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করি, অদ্ভূত শিহরণ বয়ে যায় ক্লাসের ছেলেমেয়েদের মধ্যে। কত সাবলীল আর সহজ ভঙ্গিতে ব্যাংকিং ক্লাস নিচ্ছেন।

পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে তাঁর সুদীর্ঘ ব্যাংকিং জীবনের সঞ্চিত বাস্তব অভিজ্ঞতার আলো বিলাচ্ছেন ছাত্রদের মাঝে। একজন মানুষ কতটা সমাজ সচেতন হলে তার  ছাত্রদের নিয়ে গভীরভাবে ভাবেন, তা তার পড়ানোর মধ্যেই পেয়েছি।

 এর কিছুদিনের মধ্যে জানতে পারলাম তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর মনোনিত হয়েছেন। কিন্তু তাই বলে তার মধ্যে কোনো দাম্ভিকতা ছিলনা। আমি একজন নিতান্ত সাধারণ ছাত্র হিসেবেও বাংলাদেশ ব্যাংকে তাঁর সাক্ষাৎপ্রার্থী হলে তিনি সানন্দে সময় দিয়েছেন। মূল্যবান পরামর্শ/উপদেশ দিয়েছেন।

ইতোপূর্বে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের দরিদ্র ছাত্রদের আর্থিকভাবে সাবলম্বী করে গড়ে তোলার প্রয়াসে তার উদ্ভাবিত ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্মসংস্থান প্রকল্প’ (বিকল্প) ছিল সকল মহলের কাছে প্রশংসিত। মেধাবী ছাত্রদের ব্যাংকের চাকরীর প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য সরাসরি নিয়োগ, বিশেষ পদ ও বেতনভাতা প্রদানের নীতিমালাও হাতে নিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড এ প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে নিয়োজিত হন। সৌভাগ্যক্রমে একই ব্যাংকে কর্মরত থাকার সুবাদে আমি স্যারের ব্যক্তিগত সচিব (পি.এস) হিসাবে দীর্ঘদিন তার পাশে থেকে একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ও কর্তব্যপরায়ন মানুষকে দেখার সুবর্ণ সুযোগ পাই।

 তাঁর চিন্তা চেতনায় সবসময় আবর্তিত হতো কিভাবে স্বল্প আয়ের মানুষদের ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা যায়। ব্যাংকের নতুন নতুন প্রোডাক্ট/স্কিম প্রবর্তণ ও বাস্তবায়নে সবসময় গবেষণা করতেন।

তার উদ্ভাবিত নানা প্রকল্পের সুফল এখন প্রায় সব ব্যাংকগুলিই কমবেশি ভোগ করছে।  তাঁর কথাবার্তার ভঙ্গিমা যেমন সহজ ছিল, তেমন ব্যাংকিং সহজীকরণের প্রবণতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। সততার ব্যাপারে তিনি ছিলেন অবিচল, নীতি আদর্শের সাথে কখনও আপোষ করেননি।

কোন ভয়-ভীতি, চাপ বা প্রলোভনই নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুতি ঘটাতে পারেনি। স্রোতের প্রতিকূলে কিভাবে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হয় এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম কিভাবে পরিচালনা করা যায়, সেটি তিনি তাঁর কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আমাদের শিখিয়ে গেছেন।

বাংলা সাহিত্যেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য । তাঁর প্রবন্ধ, ছড়া, উপন্যাস ও অন্যান্য লেখার মধ্যে পাওয়া যায় সমাজ পরিবর্তনের অঙ্গীকার । নিজে যেমন শুদ্ধ সাবলীল জীবনাচার করেছেন তাঁর লেখনীতেও দেখা যায় তারই বহিঃপ্রকাশ।

 তাঁর লেখা রম্য রচনা ”জীবন যেখানে যেমন” অত্যন্ত পাঠক প্রিয় একটি বই। বইটি পড়লে অবাক লাগে এই ভেবে যে, তাঁর মতো একজন রাশভারী মানুষের ভেতরে এতটা রসবোধ কাজ করে।

দরিদ্র মানুষের কল্যাণে বগুড়া জেলার নিজগ্রাম ফুলকোট-এ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নানা সামজিক সংগঠন ও  শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান ।

গত ১ ফেব্র“য়ারী ২০১৩ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলাম স্যারের বাসায়। আমাদের দেখে তিনি ভীষণ খুশি হয়েছিলেন। অসুস্থ শরীরেও তিনি আমাদের সাদরে গ্রহন করে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন।

সেদিনও ব্যাংকিংয়ের নানা খুটিনাটি বিষয় নিয়ে আমাদের সঙ্গে অনেক আলাপ করলেন। এক পর্যায়ে প্রশ্ন করলাম- স্যার, আপনি ব্যাংক ও ব্যাংকিং নিয়ে এখনো এত ভাবেন? তাঁর সরল উত্তর- হ্যাঁ, ভাবতে হয়, মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত ব্যাংকের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভাববো, তোমরাও যদি কোনো সমস্যায় পড় চলে আসবে, আলাপ আলোচনা করে নিশ্চয় একটা সমাধান খুঁজে বের করতে পারব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে যখন তাঁর নামাজে জানাজা পড়তে গেলাম তখন অনেক বড় বড় ব্যাংকারদের শরীক হতে দেখেছিলাম, ছিলেন তাঁর প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্টের অনেক শিক্ষক- ছাত্র।

এত মানুষের ভিড়েও আমার বুঝে নিতে কষ্ট হয়নি তাদের সবার চোখের আকুতি- কি যেন হারালাম। অশ্র“ সজল চোখে সবার মধ্যেই ছিল কেমন যেন এক হতাশা। সেই ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আমি ভাবছিলাম, কেন এত তাড়াতাড়ি স্যার চলে গেলেন না ফেরার দেশে, আর তো কোনোদিন তাকে ফিরে পাব না।  সেদিন বিকেলে বার বার চোখ মুছতে মুছতে শুধু এ কথাটাই মনে হচ্ছিল- আমরা শুধু একজন লিজেন্ড ব্যাংকারকেই হারালাম না, হারালাম একজন আদর্শ শিক্ষাগুরুকেও।
-----------------        

মোঃ মুকিতুল কবীর,
ব্যাংকার.
মার্কেন্টাইল ব্যাংক  লিমিটেড



reade more... Résuméabuiyad

Dr Abdullah and his unfulfilled wishes..!


Pall of gloom and sadness has descended on the hearts of multitudes of Muslims of Tamil Nadu with the sad news of the death of Dr Abdullah former Periyar Dasan on Monday. (Inna lillahi wa inna ilaihi rajeewoon).

Dr Abdullah had been known as Periyar Dasan and was a legendery Dravidian leader, orator, author, psychologist, professor of philosophy and above all a diehard Islamist.

He had many wishes, desires which remained unfulfilled. He had wanted to translate the mater-piece of Seerah literature "Muhammad, the prophet of Islam" by Mohammad Haykal in Tamil. He had shared this dream with his friends many times. He wanted to write a book on his journey towards Islam. He wanted to write on psychology with Islamic perspective. He was of the view that the western thoughts and works on human mind had got entrapped in Nafs-e-Ammara alone. Very few ventured into Nafs-e-Lawaama.. And none of them had tasted the bliss of Nafs-e-Mutmainna. He wanted to write on it. He was of the opinion that the paramount problem facing the modern man is more psychological than material. We have to liberate the mankind from the clutches of Nafs-e-Ammara more than anything else, he would assert. He wanted to write a series of articles on this subject in Samarasam Tamil Fortnightly. I had suggested a title Alai paayum manasu..! (Wavering Mind.. Behaktaa dil..) He got excited with the title and liked it very much. Alas, that wish too was not materialised..!

He wanted to write on the life history of the Prophet of Islam. Some few months back too he expressed his desire to cut short his tours, speeches, programmes etc and dedicate himself to purely research and academic work on Islam. That too remained a unfulfilled desire on his part.

His only accomplishment was a documentary film on Periyar's affection towards Islam. He had captioned the film with a provocating title "Did Periyar embraced Islam?". At one of the functions he had expressed another weird desire. He wanted to make a documentary film on life and times of Umar bin Khattab (ra), recalls Sirajul Hasan, Chief Editor of Samarasam Tamil Fortnightly.

He wanted to do so many things. He lead an active life. People used to book him six months in advance for programmes, conferences, meetings, functions. Hardly a Sunday was without any programme for him..! Once I asked him the reason for his hectic activity..! Why do you strain yourself? Why don't you sit, relax, ponder and devote your time for writing? He brushed my query with his mysterious smile and said "I had been the torch-bearer of atheism in Tamil Nadu. Thousands of youngsters had become athiest because of my speeches. I want to reach out to them and save them from the fire of hell. I don't want to be the reason for their calamity.." His tone became serious and he uttered those words with eyes swelled with tears.


May Allah reward him with jannat Ameen.
Dr. Himana Syed
reade more... Résuméabuiyad

South Indian Mutton/Lamb Biryani Recipe(Muslim style)

 South Indian mutton/lamb biryani prepared in muslim style is a delicious and less spicy recipe popular among muslims living in south Tamilnadu.This biryani is prepared during festivals like Ramzan, Bakrid, weddings and other occassions in muslim families.This type of biryani is served in hotels in south Tamilnadu run by muslim families. I adopted this recipe from my muslim family friend Rashida aunty whom I know from my birth. Try this muslim style south Indian mutton/lamb biryani at home and Enjoy cooking!!!

Ingredients:

Mutton                       1 kg
Jeera rice                    1 kg
Small onions                150 gm
Onions sliced               150 gm
Ginger paste                75 gm
Garlic paste                 75 gm
Green chillies               2 no
Chilli powder               2 tsp
Coriander powder       2 tsp
Tomato chopped         3 no
Curd                           100 ml
Mint leaves                  1 bunch
Coriander leaves          1 bunch
Garam masala powder 1 tsp (cinnamon, cloves, cardamom equally)
Fennel                          1/4 tsp
Cardamom                   4 no
Cloves                         4 no
Cinnamon                    3 to 4 strips (1 inch each)
Bay leaves                    1 no
Lemon juice of              1 no
Salt                               to taste
Oil                                150 ml
Ghee                             50 ml

Procedure:

1. Wash mutton well and keep aside. Grind small onions to a fine paste.
2. Heat oil in a thick bottom vessel. Add cardamom, cinnamon, cloves, fennel and bay leaves and fry for a minute.
3. Add ground small onion, chopped onions, green chillies (slit vertically), ginger and garlic paste. Continue frying in a slow fire till the raw smell of onions reduces.
4. Add chopped tomatoes and continue frying till it gets smashed well.
5. Add salt, chilli powder, garam masala powder, mint leaves, corinader leaves and  continue frying for few minutes.
6. Add mutton, curd and continue frying till the mutton gets 80 percent cooked. Add water if required.
7. Wash rice and keep aside. Measure the gravy and remaining water in the ratio of 1:2.
8. Transfer it to a 10 litre pressure cooker and pressure cook in a slow fire for 10 minutes.
9. Remove from heat and keep aside till the pressure goes.
10. Add 50 ml ghee and lemon juice and mix it.
12. Serve hot with Dalcha.

Source: http://www.easyfud.com/
reade more... Résuméabuiyad